বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে শুধুমাত্র পুরুষকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহিভর্‚ত ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের ৯(২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট মামলার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেনের বেঞ্চ গতকাল রবিবার এই রুল জারি করে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান এবং মানবাধিকার সংগঠন ‘এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন’ গত ৭ এপ্রিল হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করে। সেখানে বলা হয়, সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারাটি সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, ‘দু’জন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী ও পুরুষ যদি পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন এবং বিয়ে না করেন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুরুষকে শাস্তি প্রদান করা অযৌক্তিক। কারণ ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে এ ধরনের শারীরিক সম্পর্কের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কেই শাস্তি দিতে। ফলে একজনকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানে সমতার কথা বলা হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারী ও পুরুষ শারীরিক সম্পর্ক করলে তা অপরাধ নয়। অপরাধ তখনই সংঘটিত হবে যখন শারীরিক সম্পর্কের পরও বিয়ে করছে না। তাহলে কি ‘জেনাকে’ স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে এই আইনে? এজন্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি বাতিল চেয়েছি’। খবর বিডিনিউজের
গত মার্চ মাসে মাগুরায় এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ জানান শিক্ষকসহ মানবাধিকার কর্মীরাও। সেসব প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ধর্ষণসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় করা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়।
এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে গত ২৫ মার্চ তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
এ আইনের ৯(২) ধারায় সংশোধন এনে বলা হয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি দৈহিক বলপ্রয়োগ ব্যতীত বিবাহের প্রলোভন দেখাইয়া ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম করেন এবং যদি উক্ত ঘটনার সময় উক্ত ব্যক্তির সহিত উক্ত নারীর আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক সাত বৎসর সশ্রম কারাদÐে দÐনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন’।