ক্রীড়া প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে বাদ পড়ছেনা ক্রীড়াঙ্গনও। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে গত ২১ আগস্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে দেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এডহক কমিটি গঠনের। কমিটিতে স্থান পাওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে দৌড়-ঝাঁপ। তবে এবার পরিবর্তন হয়েছে ‘কেবলা’।
দোয়া বা আশীর্বাদে ধন্য হয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পদ পাওয়ার জন্য গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছিল ওয়ান এন্ড অনলি আ জ ম নাছির উদ্দীন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগকারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটার সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে ক্ষমতার বলয়ও। প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগ চিফ শেখ হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে গা ঢাকা দিয়েছেন দলের নেতা-নেত্রীরাও। অদৃশ্য হয়ে গেছেন দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদগুলো ধরে রাখা কর্তা ব্যক্তিরাও। এরই ধারাবাহিকতায় সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনও চলে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, নিরাপদ স্থানে।
সাবেক ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক মামলা হচ্ছে তাতে কোন নেতা বা গডফাদার আলোতে আসার আপাতত: কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ফলে এতদিনকার সুবিধাভোগীরা ধরেই নিয়েছেন ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে গেছে নিশ্চিতভাবেই। সুতরাং অপেক্ষা করে লাভ নাই। নীতি-নৈতিকতার ধার না ধেরে নগদে বিশ্বাসী এ সব কর্মকর্তারা হিসেব কষে কারা ক্ষমতায় বা আসছে তাদের পেছনে দৌড় শুরু করেছেন। যেভাবেই হোক জেলা ক্রীড়া সংস্থায় চেয়ার ধরে রাখতে হবে- নৌকাকে ভস্মীভুত করে নতুন ব্র্যান্ড নিয়ে হলেও। জয় বাংলা কবরে দিয়ে রং বদলে জিন্দাবাদ দিতে মুখে বাদছেনা এ সব বর্ণচোরাদের। নিজেদের মধ্যে শত বিরোধ থাকা সত্বেও এখন জামাতবদ্ধ হয়ে নতুন পাওয়ার হাউজে যাতায়াত বেড়ে গেছে এদের। শক্তির পূজারী নির্লজ্জ কাউকে কাউকে বলতে শোনা যাচ্ছে, এতদিন চাপের কারণে কিছু করতে পারিনি, আমি আসলে কট্টর জাতীয়তাবাদী। এমন দু’একজনের কথা শোনা যাচ্ছে যারা বিএনপির শাসনামলে নেতাদের সাথে থেকে কোটিপতি হয়েছেন কিন্তু দুর্দিনে গত ১২ বছরে মাঠেই দেখা যায়নি।
এসব দুধের মাছিরা যদি ক্ষমতার গন্ধ শুঁকে তদ্বির করে তাহলে সাবেক ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক কিন্তু আওয়ামী লীগ না করার কারণে বঞ্চিত, তারা ক্রীড়াঙ্গনে থাকার আগ্রহও হারিয়ে ফেলতে পারেন। অবশ্য বিএনপির এক বড় নেতা নাকি এরই মাঝে তদ্বিরবাজদের মুখের উপর বলে দিয়েছেন- এতদিন কোথায় ছিলেন?
ভিন্ন তরিকার অনুসারি বা নেতার গ্রুপ না করার কারণে বঞ্চিত ছিলেন অনেক সংগঠক। সীমাবদ্ধতার কারণে তারা কোন প্রতিবাদও করতে পারেননি। তারা যে জোরেসোরে নামবেন এটাই স্বাভাবিক- এটাই চলছে। বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সুনজরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন এসব সংগঠকরা। এদের সাথে যোগ হয়েছেন নতুন কিছু আগ্রহী ক্রীড়া প্রেমিক ব্যক্তিও যারা অতীতে স্টেডিয়াম এলাকা নিয়ে কখনও তেমন উৎসুক ছিলেন না। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে জড়িত হতে চাচ্ছেন এ সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য, তারা আরো বেশি তৎপর।
বলা যায়, সিজেকেএস এডহক কমিটিতে স্থান পেতে এখন চলছে ত্রিমুখি লড়াই। কিন্তু কমিটি ৭ থেকে ১৫ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা বেশি। যদি তাই হয়, তাহলে এত লোক কোথায় ঠাঁই পাবেন? তবে ক্রীড়াবোদ্ধাদের মতে, আগের মত কাউকে ইচ্ছে করলেই কমিটিতে নেয়া যাবেনা। কারণ এখন চলছে সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে আসা অরাজনৈতিক অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের শাসন যার সার্বিক সমর্থনে আছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যারা ইতোমধ্যেই সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে দেশবাসীর কাছে প্রশংসা পেয়েছে। চট্টগ্রামের স্পোর্টস অ্যারেনায় কাদের কন্ট্রিবিউশন কি রকম তারা নিশ্চয়ই যাচাই-বাছাই করেই কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।
তার সাথে রয়েছে বাংলাদেশে নববিপ্লবে নেৃত্বত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা অতীত রেকর্ড এবং ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি কমিটমেন্ট দেখেই নিশ্চয় কর্মকর্তা মনোনীত করবেন। তার উপর আরেকটি কথা চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে যে, শুধু সিনিয়ররাই যদি কমিটিতে থাকে তাহলে ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’ এর মত হবে- নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে কিভাবে? সুতরাং প্রতিশ্রুতিশীল নবীন আর নিবেদিতপ্রাণ প্রবীণের সমন্বয়ে যদি কমিটি হয় সেটাই হবে এফেক্টিভ।
তবে চাটুকার, তেলবাজদের কারণে চট্টল ক্রীড়াঙ্গনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে একযোগে কাজ করার শপথের বিকল্প নাই।