কেএনএফ কমান্ডারসহ নিহত ২, অস্ত্র উদ্ধার

2

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর অভিযানে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর কমান্ডারসহ ২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৩টি এসএমজি, ১টি রাইফেলসহ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার গভীর রাতে রুমা উপজেলার দুর্গম ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়া ও পলি প্রাংসা পাড়ার রাস্তার মধ্যবর্তী অংশে তাইদাংমক এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি এসএমজি, একটি চাইনিজ রাইফেল, বিপুল পরিমাণ গুলি, গুলির পাউচ, সামরিক পোশাক, ওয়াকিটকি, মোবাইল ফোন ও বেশ কয়েক হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় রুমা জোনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রুমা জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আলমগীর হোসেন। তবে সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এর সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান।
জানা গেছে, সকালে সেনাবাহিনীর বিশেষ দল রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কেএনএফ’র আস্তানায় অভিযান চালায়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি হয়। দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলির পর সেনাবাহিনী এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে ঘটনাস্থলে কেএনএফ সামরিক শাখার কমান্ডারসহ দুইজনের লাশ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৩টি সাবমেশিন গান (এসএমজি), ১টি রাইফেল এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে। সেনাবাহিনীর ধারণা, ঘাঁটির আশপাশের ঝোপঝাড় এবং পাহাড়ি পথের আশপাশে আরও কেএনএফ সদস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই পুরো এলাকা ঘিরে অভিযান পরিচালনা করেন।
এদিকে রুমা জোনের সেনা সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত হতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত পরিচালিত এ অপারেশনে কেএনএফ এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে কেএনএফ এর একজন মেজর পদবীর কমান্ডার (মেজর পুটিং/মেজর ডলি) সহ ২ জন সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৩টি অত্যাধুনিক এসএমজি, ১টি চাইনিজ রাইফেল, ৩৬৪ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ওয়াকিটকি, মোবাইল, নগদ অর্থসহ বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জামাদি ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধারকৃত রাইফেলটি ব্যাংক ডাকাতির সময় পুলিশের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্রগুলোর একটি। অপরদিকে গেলো ২৬ জুন রুমা উপজেলার সুসুং পাড়ায় সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে পালিয়ে যাওয়া ১২২টি বম পরিবার তাদের নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে সশস্ত্র জঙ্গি তৎপরতার কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সাধারণ মানুষ ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। সেনাবাহিনীর টানা অভিযানের ফলে পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। মানুষ আবারও নিরাপদে নিজ গ্রামে ফিরে আসছে। জেলার রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, অপহরণ এবং টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সেই ঘটনার পর থেকেই পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সেনাসূত্রে জানা যায়, পুরো বান্দরবানে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এ অভিযান। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানি থামিয়ে পাহাড়কে নিরাপদ রাখাই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য। সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে এলাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তারা বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি তোলে। সশস্ত্র কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা রুমা ও থানচি উপজেলায় কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালিয়ে টাকা ও অস্ত্র লুট করে। গেল দুই বছরে কেএনএফের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ সেনাসদস্যসহ প্রায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক সন্দেহভাজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।