কৃষিখাতে গুরুত্ব দিচ্ছে নতুন সরকার

3

কৃষি খাতকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন আন্তরবতীকালীন সরকার। শস্য উৎপাদনে কৃষককে যাতে সব ধরনের সার, কীটনাশক, বীজ পেতে কোনো রকম সংকটে পড়তে না হয় তার জন্য পর্যাপ্ত সারসহ সব কৃষি উপকরণ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে এই সরকার। এর জন্য গত বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ৩৬০ কোটি টাকায় ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর এক দিন পরই গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, কৃষিকাজে কৃষককে যাতে অর্থ সংকটে না পড়তে হয় তার জন্য পর্যাপ্ত কৃষিঋণ দেওয়া হবে। এ জন্য গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থ বছরে কৃষিঋণ বাড়ানো হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকারের এ দুটি সিদ্ধান্তই কৃষকের মনে আস্থা বাড়বে। এর ফলে বাড়বে কৃষির উৎপাদন, কমবে খাদ্যপণ্যের দাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানান, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে বরাদ্দ ঠিক করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ অঙ্ক অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এবার রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা, বেসরকারি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এবার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য খাতে এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ কৃষি খাতেই বিনিয়োগের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) নামে একটি ফান্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর অনর্জিত অংশ এ ফান্ডে জমা করতে হবে। এই জমা করা অর্থের বিপরীতে তাদের ২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে। এই কমন ফান্ডে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালার আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে। জানা যায়, গত অর্থবছরে নির্ধারিত ৩৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৬.১৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে বিতরণ করেছিল ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং বাংলাদেশি পড্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৯০ হাজার টন ব্লাক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বরবতী সরকার। এর মধ্যে কাতার থেকে ৩০ হাজার টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার টন এবং কাফকো থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনা হবে। গত বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব সার ছাড়াও আসন্ন মৌসুমকে আরও পর্যাপ্ত সার কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জনা গেছে। এসব সার আমদানি হলে দেশে সারের কোনো সংকট থাকবে না।