কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রলুব্ধ করছে কোম্পানিগুলো

1

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

বান্দরবানের সাতটি উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ আবাদি জমি দখল করে নিয়েছে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাক। আবাদি জমিসহ নদীর দু’পাড়, সমতল ভ‚মি, পাহাড়ি ঢালু জমি, বসতবাড়ির পতিত জমি, শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা নদীর চর- এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানলাগোয়া ফসলি জমিসহ সর্বত্র এখন তামাক চাষের দখলে। তামাক কোম্পানি কর্তৃক প্রণোদনারসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে মরণব্যাধি তামাক চাষের আবাদ।
তামাপ কোম্পানীগুলোর বিপরীতে সরকারিভাবে কৃষকদেরকে প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। অপরদিকে উৎপাদিত তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে তামাক পোড়ানো চুল্লীগুলোতেও জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনের ছোট ছোট গাছ। ফলে দিন দিন গাছশূন্য হয়ে পড়ছে পাহাড়ি এলাকাগুলো।
এদিকে বিগত মৌসুমের মতো চলতি মৌসুমেও ব্যাপক তামাক চাষ হয়েছে বান্দরবানে। কৃষকরা তাদের ফসলি জমি, স্কুলের মাঠ, মাতামুহুরী নদীর চর, নদীর দুই ধার ও বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতেও তামাক চাষ করেছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, ফসলী জমিতে তরি-তরকারী বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করলে তা বাজারজাত করার নিশ্চয়তা না থাকায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোকসান গুনতে হয়। তামাক চাষ করলে কোম্পানীগুলো নগদ এবং এককালীন মূল্যে উৎপাদিত শতভাগ তামাকই ক্রয় করে। এ কারনেই কৃষকেরা তামাক চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন। কৃষকেরা মনে করেন- তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতের অনিশ্চিয়তার কারনে ক্ষতিকর জেনেও এ তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা।
সাংবাদিক ও মানবধিকারকর্মীদের মতে- জেলায় হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে তামাক চাষ করাচ্ছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। তামাক চাষের ফলে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগব্যাধিও। এর বিপরীতে কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কৃষিজমির ঊর্বরতা নষ্ট করছে তামাক কোম্পানীগুলো।
সচেতন নাগরিকদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হওয়া সাঙ্গুনদী ও মাতামুহুরী নদী বর্ষা মৌসুমে ভয়াল রূপ ধারন করে। এক সময় এ নদীতে প্রচুর গভীরতা ছিলো। যেখানে ছিলো অথৈ পানি, এখন সেখানে বালু আর মাটির স্তুপ। নদীগুলোর অস্বাভাবিক নাব্যতা সৃষ্টির ফলে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে নদীর দু’ক‚ল উপছে বন্যার সৃষ্টি হয়। নদীর নাব্যতা হ্রাস রোধে নদীর তীর কেটে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, তামাক কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে সার ও অর্থ অগ্রিম দিয়ে চাষীদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে তামাক চাষ ব্যাপক হারে বাড়ছে। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তামাক চাষ বাদ দিয়ে বিকল্প চাষ হিসাবে গম, ভ‚ট্টা, আলুসহ পরিবেশবান্ধব রবিশস্যের বীজ, সারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন কৃষকদের। পাশাপাশি এই বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে র‌্যালি, সেমিনার করা হলে তামাক চাষ বন্ধ করা সম্ভব হবে মনে করেন। তাছাড়া কৃষকদের কৃষিপূণ্য বাজারজাত করার জন্য হিমাগার খুবই প্রয়োজন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষিবিদ এমএম শাহ্ নেয়াজ বলেন, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হলেও কোম্পানীগুলো কৃষকদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাকের আবাদ করাচ্ছে। তবে আঁখ চাষের মাধ্যমে তামাকের আগ্রাসন কমানোর চেষ্ট চলছে। তার পরেও গেলো অর্থ বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে তামাক চাষ। চলতি বছর ১১৪৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে বান্দরবানকে তামাক মুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।