কূটনৈতিকভাবে দ্রুত নিরসন জরুরি

3

বাংলাদেশে হজ ব্যস্থাপনায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছর হজের মৌসুম ঘনিয়ে আসার সাথে হজ এজেন্সি ও হাজিদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কোন কোন সময়, সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে, কোন কোন সময় এজেন্সিগুলোর সমন্বয়হীনতা, ভিসা জটিলতা, বিমানের সিডিউল পরিবর্তন কিংবা টিকিট বিড়ম্বনা ইত্যাদি নিয়ে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে কয়েকবছর ধরে সৌদি সরকারের হজ নীতিমালা, এজেন্সিগুলোকে কোটা নির্ধারণ করে দেয়, আবাসনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিমান ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ আলোচিত। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে হজ যাত্রীদের সৌদি আরবে যাতায়াত ও থাকা খাওয়ার খরচ এতে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে কয়েক বছর ধরে হজ যাত্রী কমে আসছে। নির্ধারিত সময়ের পরে একাধিক সময় বর্ধিত করার পরও প্রত্যাশিত হাজি পাওয়া যাচ্ছেনা। আজ থেকে ৬/৭ বছর আগে যেখানে ৩ থেকে ৪ লাখের মধ্যে একজন হজ মুসলমান হজ সম্পাদন করতে পারতেন সেখানে এখন প্রায় ৭লাখ টাকা ন্যূনতম খরচ করতে হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে। এ অবস্থায় অস্বাভাবিক বর্ধিত হারে হজে যাওয়া ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হজে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। যা এজেন্সিগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা নিরসনে ধর্ম উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত ৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাব নেতারা জানান, ইতোমধ্যে কোটা সংকট পুরো হজ ব্যবস্থাপনাকে সংকটে ফেলেছে। গত বছর এজেন্সিপ্রতি ২৫০ জনের কোটা ছিল, যা এ বছর ৫০০ করা হয়। সৌদি সরকারের সা¤প্রতিক নির্দেশনায় এটি এক হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। তবে হজ নিবন্ধনে সাড়া না মেলায় সৌদি সরকারের ঘোষিত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এজেন্সি ও হজযাত্রীদের জন্য গুরুতর সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাব নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে হাব নেতারা অনলাইনে হজের নিবন্ধনের সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করার দাবি জানান। সম্প্রতি হাবের একটি প্রতিনিধি দল ধর্ম উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে এ দাবি উপস্থাপন করলে, তিনি সময় বর্ধিত করার আশ্বাস দেন বলে জানা যায়। এদিকে সরকার বলছে, সেবাদানকারী কোম্পানি নির্বাচন, তাঁবুর এলাকা সংরক্ষণ, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাবে, অথচ হজ এজেন্সিগুলো এখনো চুক্তিই শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে সরকার হজ এজেন্সির কোটা নিয়ে বারবার সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ করার কারণে বিরক্তিও প্রকাশ করেছে তারা। উল্লেখ্য, গত বছর সৌদি আরব হজের পূর্ণ কোটা প্রদানসহ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশনের কাজ অনেক সহজ করে দেয়। হজযাত্রীদের জন্য কষ্ট লাঘবের এত উদ্যোগ সত্তে¡ও সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজের নিবন্ধনে এ বছর আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি সরকার তাদের নীতিমালা অনুযায়ীই হজ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আমাদের দেশের সরকারও রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী হজ কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ নেয়। সেক্ষেত্রে সৌদি সরকারের কোনো পদক্ষেপ যদি আমাদের আইন-কানুনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা সমাধান করা সরকারেরই দায়িত্ব। হাব নেতারা এ বিষয়টি সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ভুলে গেলে চলবে না, প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন থাকে, একবারের জন্য হলেও পবিত্র মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা এবং মদিনা মনোয়ারায় গিয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামার রাওজা জিয়ারত করা। তারা এ মহান কাজটি সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সি মালিক এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করেন। কাজেই হজ যাত্রীরা যেন হজ সুন্দর ও সুচারুরূপে পবিত্র হজের কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারেন, সেজন্য এজেন্সিসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা জরুরি। আমরা আশা করি, সরকার উদ্ভুদ সমস্যা সমাধানে সৌদি সরকারের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্টদের যৌক্তিক দাবির প্রতিসুদৃষ্টি দিবেন।