প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অস্পষ্টতা এবং রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে ফেইসবুকে এক পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার তা সরিয়ে নিয়েছেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তবে তার আগেই বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার সেই ফেইসবুকে পোস্টের স্ক্রিনশটও শেয়ার করেছেন অনেকে। খবর বিডিনিউজের
ওই পোস্টে বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না বলেই তার বিশ্বাস। সেই সঙ্গে নির্বাচন ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক শক্তিশালী বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তৈয়্যব। তিনি লিখেছিলেন, ‘অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এর ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য ড ইউনূস স্যার এর দরকার আছে।’
শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেইসবুক পাতায় ওই পোস্ট দেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। কিন্তু বিকেল থেকে সেই পোস্ট আর দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’, বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে হঠাৎ দেখা করে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহব্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাতে বিবিসি বাংলার এমন খবর প্রকাশের পরই শুরু হয় নানা আলোচনা। ছাত্রজনতার প্রবল আন্দোলনে গত বছর ৫ অগাস্ট সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার তিন দিন পর ৮ অগাস্ট নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর সাড়ে নয় মাস পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও অভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভিন্ন অবস্থান, ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই কিছু উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ দাবি করে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে খবরে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুঞ্জনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যান নাহিদ; যিনি এনসিপির দায়িত্ব নিতে গত ফেব্রæয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। নাহিদের পর সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না, এমন আশা ব্যক্ত করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ওই ফেইসবুক পোস্টে বলেন, ‘ক্যাবিনেটকে আরও গতিশীল হতে হবে। সরকারকে আরো বেশি ফাংশনাল হতে হবে, উপদেষ্টাদের আরো বেশি কাজ করতে হবে, দৃশ্যমান অগ্রগতি জনতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে- এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না। আমাদেরকে দেখাতে হবে যে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে জনতার সম্মতিতে ক্ষমতায় এসে প্রফেসর সাফল্য দেখিয়েছেন।’ ইউনূসের প্রতি সমর্থনের কথাও সেখানে বলেন তিনি।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সম্মান আছে, এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমি মনে করি, সরকারকে এখন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনায় বসতে হবে, নিয়মিত বসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত চাইতে হবে। কোন ধরনের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।
বিশেষ সহকারী সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন তার পোস্টে। গণঅভ্যুত্থানের ৯ মাস বাদে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, তার উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনে জোর দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে করিডোর, বন্দর, সংস্কারের মতো বিষয়ও উঠে আসে বলে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।
সেনাবাহিনী প্রধান ‘জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস’ রক্ষা করতে পারেননি মন্তব্য করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছিলেন, সেনাবাহিনীও রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোন সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তেবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব এবং আস্থার জায়গা- সেটা কেউ ভঙ্গ করবে না।
আগামী এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচন হতে পারে-এমন মত প্রকাশ করে তৈয়্যব লিখেছিলেন, দরকারি প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচন এপ্রিল-মের কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেই আশা করি, তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। এসময়ে সকল যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে, করতে হবে জুলাই সনদ। তবে ডিসেম্বর থেকে জুনে দেয়া রোডম্যাপ মতে নির্বাচনের এক্সাক্ট ডেট ঘোষণার এখতিয়ার শুধুমাত্র স্যারের। স্যারের এখতিয়ার অন্য কেউ হাইজ্যাক করতে পারবে না। স্যারকে যখন আনা হয়েছে, তখন বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে স্যার বলেছেন, আমার কথা শুনতে হবে।
‘জুলাই-আগস্ট’২৫ এ আমরা জাতীয়ভাবে দুই মাস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির উদযাপন করব, ইনশাল্লাহ। এবং আগস্টের মধ্যেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচারের প্রথম রায়টি আলোর মুখ দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করি। ইনশাআল্লাহ আমরা হারব না, আমাদের হারানো যাবে না,’ লিখে পোস্ট শেষ করেছেন তিনি।