কীসের পেছনে ছুটে চলছি ?

1

লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

কোন এক কবরস্থানে লেখা ছিল। গন্তব্য তোমার এটাই ছিল, বেশ দেরি করে দিয়েছো আসতে, কি পেয়েছো এই দুনিয়ার জীবন থেকে?
তবে কেনো এতো জায়গা জমি ধন সম্পদ আর মানুষে মানুষে জোর জুলুম খুনোখুনি। কেন সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ? বয়সের সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আরও আক্রমণাত্মক হই। কিছু লোকতো পুরা সাইকো তারা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেই সব প্রত্যাখ্যান করে এমনকি সম্পর্কও। আমি ভাবতে থাকি তারা সংসার করে কিভাবে নাকি পুরুষ হিসেবে মেনে নেয়, মেনে নিতে হয় এমন লোক গুলোকে। যেদিন থেকে আমি জানতে পেরেছি, আমার রিজিক আমি ছাড়া অন্য কেউ ভোগ করতে পারবে না, সেদিন থেকে আমার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি তৈরি হয়েছে। সেদিন থেকে আমি কাউকে নিজের প্রতিদ্ব›দ্বী ভাবিনা, কারও ভালো দেখে আমি কাতর হইনা। জীবনে যা যা পাইনি তার কোনটাই আমার রিজিকে ছিলোনা বিশ্বাস করেছি এবং সেজন্য আফসোস হয়নি আর কোনদিন।আমি একটা শান্তির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। নিজের রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তার কিচ্ছু নেই। আমার বা আপনার ভাগেরটুকু কেউ নিতে পারবেনা, এই আওকাত আল্লাহ তায়ালা কাউকে দেননি। “রিজিকের ফায়সালা আসমানে হয়, জমিনে না”। আমার জন্মের ব্যাপারে আমি জানতামনা, মৃত্যু কখন কোথায় হবে আমার জানা নেই। কিভাবে মৃত্যু হবে তাও জানিনা। অথচ আমি প্রতিদিন যুদ্ধ করি কারণ আমি ভাবছি আমিতো হাজার বছর থাকবো। আমার মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়না। আমার অন্তরে ভয় নেই। আমি দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। কবর-সব মানুষেরই এই পৃথিবীতে শেষ ও স্থায়ী ঠিকানা। এটা মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য-এ নিয়েই আমার ব্যক্তিগত কিছু অনুধ্যান।
আসলে আমরা কীসের পেছনে ছুটে চলছি? একেবারে শৈশব থেকে যে প্রচন্ড দৌড়; এর গন্তব্য কোথায়? আমরা স্কুলে ভালো রেজাল্ট, কর্মে সাফল্য আর পদোন্নতি; অর্থ-যশ-খ্যাতি-ক্ষমতার জন্য ছুটে চলি। অন্যকে টেনে নামানো, ছিদ্রান্বেষণ, কালিমা লেপনে ছোটাছুটির অন্ত নেই। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও কত প্রাণান্তকর চেষ্টা! তাতে কি শেষরক্ষা হয়? এক সময় কিন্তু দেহটাই শেষ হয়ে যায়। শেষকালে মনে হয়– ‘তুমি কার, কে তোমার!’ দৌড়ই যার একমাত্র কর্ম; গন্তব্যেই তার সমাপ্তি। অনাগত কাল কেন তবে আমাকে মনে রাখবে?
জীবন তো ক্ষণস্থায়ী; পদ্মপাতার জল। বাউলের উপলব্ধি– ‘একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার, কেন বান্ধ দালান-ঘর।’ এটাই নির্মম সত্য। কিন্তু এই ক্ষুদ্র জীবনের চলার পথে আমরা কি তা মনে রাখি? কত ভালোবাসা! কত স্বপ্ন! জীবনকে ঘিরে কত আয়োজন! জীবন সাজাতে, জীবন রাঙাতে মেধা-শ্রম-সময়ের কী অফুরান বিনিয়োগ! অথচ ভেবে দেখি না, পৃথিবী থাকার স্থান নয়; চিরদিন এখানে থাকা যায় না। কেউ থাকেনি, থাকতে পারেনি, থাকতে পারবেও না; থাকা সম্ভব নয়। থাকা নয়, বরং চলে যাওয়াই সুনিশ্চিত। তারপরও আমরা আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখি, সোনার হরিণ বা মরিচিকার পেছনে আমৃত্যু দৌড়েই চলেছি।
আমার রিজিক যতটুকু তার চেয়েতো একবিন্দু পানিও আমি পাবনা। আমার রিজিকের সাথে আরও কিছু সম্পৃক্ত রয়েছে। শুধু খাদ্যদ্রব্যই কিন্তু রিজিক নয়! পরিবারের সুখশান্তি, পেশাজীবনের সফলতা, নেক জীবনসঙ্গী, নেক সন্তান, উত্তম আখলাক,টাকা পয়সা, নেককার বন্ধুও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। আমি আমার কোন ইচ্ছা কারো উপর চাপিয়ে দিতে চাইনা। ভালো মন্দের ফয়সালা আল্লাহর পক্ষ হতে হয়। অনেক সময় আমরা নিজেদের পরিপূর্ণ বা পরিপক্ব মানুষ ভাবি। আসলে সেটাই অহংকার। একমাত্র আল্লাহ তালাই মহাবিশ্ব পরাক্রমশালী। অহংকার তাঁরই চাদর। তাই মানুষের অহংকার করাকে আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাটানি (নাউজুবিল্লাহ) করার সাথে তুলনা করা হয়। আফসোস আমরা অহংকারের বসে প্রতিনিয়ত তাই করছি। আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক