কালুরঘাট সেতু আশার আলো

3

 

বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দুঃখ হিসেবে খ্যাত কালুরঘাট পুরনো সেতুটি অবশেষে জোড়াতালিতে নতুনের ছোঁয়া নিয়ে উন্মুক্ত করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের তিন মাস আগে তড়িগড়ি করে এ সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ টিম এ সংস্কার কাজের পুরোটাই তদারকি করার দায়িত্ব নেয়। তিনমাসে রেল লাইন সংস্কার করে ট্রেন যাতায়াতের উপযোগী করা হলেও যানবাহন ও মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে আরো প্রায় এগারো মাস সময় লেগেছে। অর্থাৎ সংস্কার কাজের জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত কালুরঘাট সেতুতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিলো যান চলাচল। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে কয়েক ধাপে চলে সেতুর সংস্কার কাজ। পরিপূর্ণ সংস্কার কাজ শেষে গতকাল রবিবার সকালে ঐতিহাসিক এ সেতুটি উন্মুক্ত করা হয় যান চলাচলে। এ সেতুতে আগের মত কোন ভারি যান চলবে না। বড় বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধে ৮ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা নির্মাণ করে দিয়েছে রেলওয়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯৩ বছরের পুরনো এ সেতুকে মজবুত করে ট্রেন ও যান চলাচলের জন্য উপযোগী করতে লেগে যায় চৌদ্দমাসেরও বেশি সময়। এসময় নদী পারাপারের জন্য ব্যবহার করতে হয় ফেরি। কিন্তু জোয়ার ভাড়ার এ নদীতে ফেরি পারাপারে এতদঅঞ্চলের মানুষকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ। অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে অনেকবার তলিয়ে গিয়েছিল এ ফেরি। ফেরি পারাপার করতে গিয়ে এক কলেজছাত্রীর প্রাণহানিসহ একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটে। ১৯৩০ সালে নির্মিত কালুরঘাট সেতু একমুখী হওয়ায় এক প্রান্তের গাড়ি পার হতে গেলে অন্য প্রান্তের গাড়ি দ্বাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এছাড়া গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হতেন পথচারীরা। তবে এবার সেতু সংস্কার করে একপাশে যুক্ত করা হয়েছে সাধারণের পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে। যা গত কোরবানির ঈদের সময় পথচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সেতু সংস্কার কাজের তিনমাসের মাথায় শুরু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল। সেতুর সংস্কার কাজ বিলম্বিত হওয়ায় ও ফেরি পারাপারে দুর্ভোগ এড়াতে যান চলাচলের জন্য দ্রুত সেতুটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন সেতু ব্যবহারকারী বোয়ালখালী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো যান চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে। সেতু দিয়ে যানচলাচল শুরু হওয়ায় বোয়ালখালীবাসীর শহরে যাতায়াতের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে নিঃসন্দেহে। রবিবার যান চলাচলে সেতু খুলে দেযার পর সেতু পারাপারকারী একজন পথচারী গণমাধ্যমকে জানান, সংস্কারের মাধ্যমে যান চলাচলের উপযোগী করে সেতুটি খুলে দেওয়ায় বেয়ালখালী বাসীর কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে, তবে নতুন রেল কাম সড়ক সেতুর কাজ দ্রুত চালু করার আহবান করেছি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশলীরা জানান, বুয়েট বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের পরামর্শে ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তত্ত্বাবধানে গত বছরের ১ আগস্ট থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রকচার লিমিটেড। সংস্কার কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি ট্রেন চলাচলের মজবুত ও উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে নতুন করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন আর সেখানে পানি জমবে না।
সেতু নির্মাণের ৯৩ বছর পর রেল ও যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি এখন পথচারীরা পায়ে হেঁটে পারাপার হতে পারবেন। রাতের জন্য সেতুতে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত সংবাদকর্মীদের জানান, কয়েকটি ধাপে সেতুটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে। সর্বশেষ যান চলাচলের জন্য উপযোগী করে সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বড় বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধে সেতুর দুই প্রান্তে ৮ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩০ সালে প্রায় ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে স্টিলের কাঠামোর কালুরঘাট রেলসেতু নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটিতে মটরযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘ ষাট বছর প্রায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে সড়ক ও রেল পথে যাতায়াতের এটিই ছিল প্রধান মাধ্যম। নব্বই দশকে কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত ব্রিজ নির্মাণ হলে সড়কপথের দূরত্ব কেেম আসে। সড়ক যোগাযোগ সহজতর হয় তবে টেনের গতি কমতে থাকে। বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দাবি কর্ণফুলী নদীর উপর তৃতীয় সেতু নির্মাণের। যাতে রেল কাম যানবাহন চলবে। বিগত সরকার একাধিকবার এ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেতু নির্মাণের প্রকল্প একনেকে পাম করেছে। এখন অপেক্ষার পালা কবে নাগাদ এ সেতু আলোর মুখ দেখবে!