নিজস্ব প্রতিবেদক
কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ গত বছরের আগস্টে শুরু হয়। তিন মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে যান চলাচলের উপযোগী করার কথা বলা হলেও এক বছরেও শেষ হয়নি সংস্কার। এরমধ্যে কয়েকদফা সংস্কারের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংস্কার কাজের এই সময়েও কালুরঘাট সেতুর ‘শনির দশা’ কাটছে না। সংস্কারকালে কালুরঘাট সেতুর নিচে জাহাজের ধাক্কার পর গত শনিবার রাতে একটি জিপ গাড়ি রেলিং ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগে এমন দুটি ঘটনায় বিপত্তি বেড়েছে।
কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি চলাচল করার কারণে সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ স্লো করায় বাধ্য হয়ে সেতুর উপর গাড়ি চালানো হচ্ছে। সেতু সংস্কার কাজে জড়িত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়া হলেও এতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। যে কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, ‘সেতুতে দুর্ঘটনার পর আপাতত অস্থায়ীভাবে একটি ব্যারিয়ার দেয়া হয়েছে। কার্পেটিং কাজ প্রায় শেষের পথে। কয়েকদিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হলেই রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেতু চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। এই সেতুতে আগেও একটি শিপ আঘাত করেছিল। সেসময় ওই শিপের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি চলাচলে বাধা দিলেই সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়। যে কারণে চাইলে বাধা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না।’
জানা যায়, গত বছরের ১ আগস্ট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু সংস্কারের দায়িত্ব পায়। কাজ শুরুর পর প্রাথমিকভাবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ৫ নভেম্বর সেতুর সংস্কার কাজ চলাবস্থায় কক্সবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ শুরু হয়। প্রতিদিন ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর উপর ট্রেন চলাচল করে। গত জানুয়ারি মাসে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম চট্টগ্রাম সফরকালে মার্চ মাসে সেতু পুরোপুরি যান চলাচলে খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল।
গত ৩০ এপ্রিল এমভি সামুদা-১ নামে একটি কার্গো জাহাজ কালুরঘাট সেতুর স্প্যানে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছিল রেলওয়ে। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বোয়ালখালী থেকে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসার পথে একটি জিপ গাড়ি রেলিং ভেঙে নদীতে পড়ে গেলে দুইজন আহত হয়। এ ঘটনার পর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগে আবারোও বিপত্তি বাড়ে।
বোয়ালখালীর বাসিন্দা রিংকু চৌধুরী বলেন, সেতুর সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ না করে কালক্ষেপন করেছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করলে জোরপূর্বক মানুষকে সেতু ব্যবহার করতে হতো না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বেশি সুবিধা দিতে গিয়ে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে রেল।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রæনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল। কিন্তু এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। কিন্তু দুই বছর আগে সেতুটি অবস্থা আরও বেশি খারাপ হলে বুয়েট টিম পরিদর্শন করে সেতুটি সংস্কারের পরামর্শ দেয়। এরপরেই সেতুটি সংস্কার কাজ শূরু করে রেলওয়ে।