নিজস্ব প্রতিবেদক
কালুরঘাটে ফেরিতে করে কর্ণফুলী নদী পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা করে (টোল) নেওয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার তা বন্ধের নির্দেশ দেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। গতকাল বিকেলের দিকে কর্মকর্তাদের চাপের মুখে বন্ধ হয়ে যায় টাকা তোলা।
গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, কালুরঘাট সেতুর বোয়ালখালী অংশের ফেরিঘাটে বেইলি ব্রিজের পিলারের মুখে একটি হ্যান্ডমাইক রাখা হয়েছে। আর শহরের অংশে ফেরির ইজারাদারের নিয়োজিত একজন কর্মী মাইক হাতে নিয়ে মাইকিং করে বলছেন, ‘ফেরিতে উঠলে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে ভাড়া।’
জানতে চাইলে ফেরির ইজারাদারের বোয়ালখালী অংশের ফোরম্যান সায়িদুর রশীদ বলেন, ‘এটা মালিকপক্ষ (ফেরি ইজারাদার) থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফেরি দিয়ে পার হলেই পাঁচ টাকা দিতে হবে।’
জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে ফেরিতে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে টাকা নেওয়ার বিষয়টি দেখা যায়। দুপুরে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের (সওজ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিনকে অভিযোগ দেওয়া হলে, সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা নেন। তখন তিনি বলেন, ‘ফেরিতে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। অ্যাকশন নিতে এখনই প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’ এরপর বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের একজন প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান।
এ সময় সওজ প্রতিনিধি টাকা আদায় বন্ধ করতে বললে প্রথমে ফেরির ইজারাদারের কর্মীরা রাজি হননি। এজন্য কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ফেরি চলাচল। পরে সওজ’র চাপের মুখে টাকা আদায় বন্ধ করতে বাধ্য হন ইজারাদার। এরপর পুনরায় ফেরি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে তদন্তে যাওয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মো. ভুট্টু বলেন, ‘এখন টাকা নেওয়া বন্ধ আছে। আমরা তাদেরকে কড়া নিষেধ করে দিয়েছি। বিষয়গুলো আমি অফিসে রিপোর্ট আকারে জানিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া ইজারাদার যাত্রীদের কাছ থেকে কেন টাকা নিবেন? এটা তো অন্যায়। ফেরির ইজারাদার কর্তৃপক্ষের না পোষালে লিখিতভাবে সওজকে জানাতে পারবেন, তবে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না।’
গতকাল শনিবার রাত ৯টায়, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেরির যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ আগস্ট সংস্কার কাজের জন্য কালুরঘাট সেতু বন্ধ ঘোষণা করলে যানবাহন পারাপারে কালুরঘাটে ফেরি চালু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ফেরি চালুর পর টোল নির্ধারণ করে ফেরিঘাট ইজারা দেয় সওজ। এতদিন যানবাহন পারাপারে টোল আদায় করা হলেও মানুষ পারাপারে তা নেওয়া হতো না। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে মানুষ পারাপারে টোল আদায়ের নতুন নিয়ম চালু করে ইজারাদার। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন কর্ণফুলী তীরবর্তী মানুষ ও বোয়ালখালী উপজেলাবাসী।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখার উপসচিব ফাহমিদা হক খান রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগাধীন কালুরঘাট ব্রিজের নদীর পশ্চিম প্রান্ত (মোহরা অংশ) থেকে পূর্ব প্রান্ত (বোয়ালখালী অংশ) পর্যন্ত ফেরিঘাট পারাপারকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ে টোল নীতিমালা, ২০১৪ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহন চলাচলের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়। এতে ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, হেভি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক (২ এক্সেল বিশিষ্ট) ২২৫ টাকা, বড় বাস (চালক ব্যতীত ৩১ অথবা তদুর্ধ্ব আসন) ২০৫ টাকা, মিনি ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর) ১৩৫ টাকা, মিনিবাস/কোস্টার (৩০ জন যাত্রী বহনের উপযোগী) ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস (৮ থেকে ১৫ জন যাত্রী) ৯০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন (পিক-আপ, কনভারশনকৃত জিপ, রেকার) ৯০ টাকা, সিডান কার ৫৫ টাকা, অটো টেম্পু, সিএনজি অটোরিক্সা, অটোভ্যান, ব্যাটারিচালিত ৩/৪ চাকার মোটরাইজড যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা, রিকশাভ্যান/রিকশা/বাই সাইকেল/ঠেলাগাড়ি ৫ টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়। এতে জনপ্রতি টোল আদায়ের বিষয়ে বলা হয়নি।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, জনপ্রতি টাকা তোলার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা কড়া নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে এভাবে আর মানুষ থেকে টাকা আদায় করা না হয়। শুধুমাত্র যানবাহন থেকে টোল আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেভাবে টোল আদায় হচ্ছে।