পূর্বদেশ ডেস্ক
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “বিদ্যুৎ খাতে অনিয়মগুলো করা হয়েছিল একটা আইনের মাধ্যমে। ২০১০ সালের দ্রæত বিদ্যুৎ কেনার আইন। হাই কোর্ট এটাকে ‘সংবিধানবিরোধী’ বলেছে। এটা একটা সুখবর আমরা পেয়েছি।”
ভারতের আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক যেসব চুক্তি, সেসব থেকে সহজে বের হওয়া যায় না। বের হলে মামলায় জড়াতে হতে পারে। এ জন্য ধীরস্থিরভাবে আগাচ্ছি। আমরা একটা জাতীয় কমিটি করেছি। যারা বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ না। সে কমিটি বিদ্যুতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখবে। হুট করে কিছু করতে চাই না। কী কী অনিয়ম সেগুলো বের করতে চাই। সেই ফাইন্ডিংস এর ভিত্তিতে করব।” খবর বিডিনিউজ’র
অন্তর্র্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তির পর সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তা যে উপদেষ্টাদেরও নজরে এসেছে তা উঠে এল ফাওজুল কবির খানের বক্তব্যে। এ সময় তিনি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালুরঘাট রেলসেতুর কাজ শুরু হবে বলেও ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রামে এক আয়োজনে তিনি বলেছেন, “সবাই বলে যে, এই বুড়ো বুড়ো মানুষগুলো কী করে? তিন মাস হয়ে গেল। আসলে আমরা কিন্তু কেউ বসে নাই। উপদেষ্টা পরিষদে যাদের আপনারা বলে বেড়াচ্ছেন বুড়ো মানুষ, তারা কিন্তু ইয়াংরা ফেসবুক টাইম বাদ দিয়ে যে সময়টা কাজ করে, তার চাইতে বেশি কাজ করে বেড়াচ্ছে।”
গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা।
সরকার ‘মৌলিক কাজ’ করছে বলে তা দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে ফাওজুল বলেন, “আমাদের এটা কোনো প্রচার প্রোপাগান্ডার কাজ নয়। আমাদের কাজ কীভাবে অপচয় কমানো যায়, সে বিষয়ে। আমরা সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলেছি যে অপচয় কমান। সরকারকে জ্বালানি খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে আরও বেশি। আমরা এগুলো বন্ধ করতে চাই। এজন্য আমাদের কার্যক্রম আপনারা দেখতে পাবেন না। প্রচার হবে না কিন্তু আমরা মৌলিক কাজ করছি। ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন’ চলবে না। ‘তথাকথিত উন্নয়ন’ চলবে না, ‘অপচয়ের উন্নয়ন’ আমরা করব না।”
‘অপচয়ের উন্নয়ন’ বলতে কী বোঝায়, তার একটি ব্যাখ্যাও দেন ফাওজুল। তিনি বলেন, “খুলনার রূপসাতে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে, সেখানে গ্যাস নাই। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে। এই প্রকল্প যখন পাস হয়, বলা হয়েছিল বছরে ১৪শ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। যখন জিজ্ঞাসা করলাম যে ‘ছয় মাসে কত টাকা পাইছ’, তখন বলে ৩৭ কোটি টাকা। বলা হচ্ছিল আমরা সিঙ্গাপুর হয়ে গেছি, আসলে কিন্তু কিছুই হয়নি। সম্ভবত আমরা যেখানে ছিলাম তার থেকে আরও পিছিয়ে গেছি। স›দ্বীপে যোগাযোগ খারাপ। এখনও সেখানে মানুষ মারা যায়, এখনও কাদাপানিতে মাড়িয়ে অতিক্রম করতে হয়। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? মানুষগুলোকে নির্বিঘেœ পারাপার করা রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব নাকি বাহারি সব প্রকল্প করা?”
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলটিকে ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন’ দাবি করে ফাওজুল কবির খান বলেন, “টানেলের পাশে সড়কে কোনো গাড়ি দেখেনি। পরিকল্পনাটি ছিল এমন যে, মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হবে। এবং সেটার সঙ্গে একটা সড়ক সংযোগ হবে। সেখানে ইকোনমিক জোন হবে, আর্থিক কর্মকান্ড হবে। অথচ কিছুই হয়নি শুধু একটা বিদ্যুতের প্লান্ট হয়েছে। আর এখানে একটা টানেল হয়ে গেছে। ট্রাফিক পাবেন কোথায়? সমুদ্র বন্দর থেকে জিনিস আসবে-যাবে, ইকোনমিক জোন থেকে মালামাল যাবে, তো কিছুই হয়নি। আমি আসছি দেখছি, দেখি কী করা যায়।”
সভায় বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে কি না জানতে চাওয়া হয় উপদেষ্টার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগবে না। তা হলো, বাসাবাড়িতে গ্যাস দেওয়া হবে না। একসময় গ্যাসের রিজার্ভ ছিল। এখন কিন্তু ক্রমাগত কমছে। প্রতিদিন ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস দরকার। স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানি মিলে ৩ হাজার। এ জন্যই গ্যাসের এই সংকট। আমরা প্রত্যেক বছর ৬ হাজার কোটি টাকার মত গ্যাস আমদানি করি।”
চলতি বছরই সরকার ৫০ এবং দুই বছরে আরও ১০০টা কূপ খনন করা হবে জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “সমুদ্রেও আমরা ডিসেম্বর মাসে অফসোর বিডিং রাউন্ড করব। আমরা যদি একটা বড় ডিপোজিট পাই তিন-চার বা পাঁচ টিসিএফ এর, তাহলে কিন্তু আমাদের যে এলএনজি আমদানি যেটা হয়, সেটা বন্ধ করতে পারব। জ্বালানি আমদানি করা সহজ। কিন্তু জ্বালানির কূপ খনন করে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করার চেষ্টাটা কিন্তু হয় না, আমরা সেটাতে জোর দিচ্ছি।”
জ্বালানি তেল পরিশোধনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরুর কথাও বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “দুর্বৃত্তায়নের কারণে এই রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এটা একজন দখল করে নিয়েছে। এই যে দখলের মানসিকতা, টাকা, রিজার্ভ, জমি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংক দখলের যে অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, আমরা সেটা অপসারণ করছি।” ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালুরঘাট রেলসেতুর কাজ শুরু হবে বলেও ঘোষণা দেন ফাওজুল।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রামের ডিসি ফরিদা খানম এবং বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।