ছবি ও লেখা :
এম. হায়দার আলী
অনেক দিন ধরে খুঁজছি বেগুনি কালিম পাখি। চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায়ও মিলেনি কালিমের দেখা। নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকার সোলেমান নামে এক বয়োবৃদ্ধ জানালেন, সবাই এ পাখি চিনেও না, নামও শোনেনি। তবে আমি এ শীতে বেশ কয়েকবার কালিম দেখেছি আবাসিক সংলগ্ন জলাশয়ে। এ পাখি দেখতে হলে বা ছবি তুলতে হলে ভোরে আসতে হবে।
এ তথ্য জেনে পরপর তিনদিন ভোরে গিয়ে তৃতীয় দিন দেখা মিলে কালিমের। দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলাম মায়াবী এ পাখির।
উইকিপিডিয়ায় তথ্য আছে, বেগুনি কালিম আবাসিক, পরিযায়ী অথবা খাদ্য থাকা সাপেক্ষে আংশিক পরিযায়ী স্বভাবের হয়। জলচর পাখিটির বাংলায় কালিম, কায়িম, কায়েম, সুন্দরী পাখিসহ অনেকগুলো নাম রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে এর নাম পুকেকো। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। বেগুনি কালিম মুরগির আকারের বেগুনি রঙের একটি পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৫ সেমি, ডানা ২৬ সেমি, ঠোঁট ৪.৫ সেমি, পা ৯ সেমি, লেজ ১০ সেমি ও ওজন গড়ে ৬৫০ গ্রাম। এর মাথা ফিকে, ডানা সবুজ দীপ্তিময়। লেজের অংশ কালো পালকে ঢাকা। লেজতল-ঢাকনি সাদা।
এছাড়া দেহের সর্বত্র রঙ নীলচে বেগুনি। ঠোঁটের গোড়া থেকে পেছন পর্যন্ত লাল বর্ম বা মুকুট রয়েছে। সাধারণত স্ত্রী পাখির বর্ম পুরুষ পাখির বর্ম থেকে ছোট হয়। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই চোখ রক্ত-লাল। ঠোঁট টকটকে লাল, ঠোঁটের আগা ফিকে। পা দীর্ঘ, শক্ত ও লাল। পায়ের সন্ধি বাদামি।
বেগুনি কালিম হাওর, বিল, নলবন ও তৃণপূর্ণ স্রোতহীন জলাভূমিতে বিচরণ করে। যেসব জায়গায় ভাসমান বা অর্ধভাসমান কচুরিপানা, গুল্ম, লতা, শাপলা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সেসব জলাশয় এদের পছন্দের বিচরণস্থল। এছাড়া লোনা পানির জলাশয়, কাদাভূমি, ধানক্ষেত, বনের ধারে ও মৌসুমী জলাশয়গুলোতেও এরা বিচরণ করতে পারে।
বেগুনি কালিমের খাদ্যতালিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জলজ উদ্ভিদ। এর প্রধান খাদ্য বীজ, শস্যদানা, কচি ঘাস, কচি পাতা, তৃণমূল, কচি জলজ উদ্ভিদ ও তার নরম কান্ড, শাপলা ইত্যাদি। এছাড়া এরা জলজ পোকামাকড় ও পোকামাকড়ের লার্ভা, মাকড়শা, কেঁচো, জোঁক, শামুক, চিংড়ি, ব্যাঙ, ছোট মাছ, মাছের ডিম ইত্যাদি খায়। ছবিটি নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে তোলা।