কালিদাস রায়

1

রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তার রচিত কাব্যগুলির মধ্যে তার প্রথম কাব্য কুন্দ (১৯০৭), কিশলয় (১৯১১), পর্ণপুট (১৯১৪), ক্ষুদকুঁড়া (১৯২২) ও পূর্ণাহুতি (১৯৬৮) বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ, বৈষ্ণবপ্রাণতা ও সামান্য তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তার কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
১৮৮৯ সালের ২২ জুন বর্ধমান জেলার কড়ুই গ্রামে কালিদাস রায়ের জন্ম। তিনি ছিলেন চৈতন্যদেবের জীবনীকার লোচনদাসের বংশধর। কালিদাসের শৈশব কেটেছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে। সেখান থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করেন। কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে টালিগঞ্জে ‘সন্ধ্যার কুলায়’ নামক নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কালিদাস রায়।
১৯১৩ সালে রংপুরের উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী হাইস্কুলের সহশিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সাত বছর। তারপরে (১৯২০-৩১) দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বড়িশা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার ১১ বছর পর রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের সহায়তায় তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখায় সহকারী শিক্ষকরূপে যোগদান করেন এবং ১৯৫২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি রবীন্দ্র-ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। এরপরে কবিতা, ছোটগল্প, রম্য সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেন। ‘বেতালভট্ট’ ছদ্মনামে লিখিত বহু রসরচনা পাঠক সমাজে সমাদৃত।
সাহিত্যকর্মের অবদানের জন্য কালিদাস অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদ ‘কবিশেখর’ উপাধি (১৯২০), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (১৯৫৩) ও ‘সরোজিনী স্বর্ণপদক’, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৬৩) এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি (১৯৭১) প্রদান করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান। সূত্র: বাংলাপিডিয়া