প্রতারণার মামলায় কারান্তরীণ এক বন্দীকে নির্যাতনের অভিযোগে জেল সুপারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার রেশ না কাটতেই এবার কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেক বন্দীর হদিস মিলছে না। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দিনভর খোঁজাখুঁজি করেও ফরহাদ হোসেন রুবেল (২৮) নামে খুনের মামলায় কারাগারে আটক ওই বন্দীর সন্ধান না পেয়ে সন্ধ্যায় সিএমপির কোতোয়ালি থানায় জিডি করে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে রাত এগারটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
সুরক্ষিত কারাগারের ভেতর থেকে হঠাৎ করে এভাবে বন্দী উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান ও জেলার মো. রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অফিসের টেলিফোন ও মোবাইলে একাধিবার কল করার পরও তারা রিসিভ করেন নি।
তবে কারা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) ফজলুল হক রাতে পূর্বদেশকে বলেন, কারারক্ষীর পাশাপাশি বাইরে থেকে পুলিশ এনে কারাভ্যন্তরে দিনভর খোঁজাখুঁজি করেও বন্দী ফরহাদ হোসেন রুবেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে শীঘ্রই তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে জেল সুপারের কাছে ঘটনার ব্যাপারে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনের মত গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে লকআপ (তালাবদ্ধ) সম্পন্ন করা হয়। সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসা ফরহাদ হোসেন রুবেলসহ কারাভ্যন্তরের ১৫ নম্বর কর্ণফুলী ভবনের হাজতিদের কক্ষও এসময় তালাবদ্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল শনিবার সকাল ছয়টায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে কক্ষের তালা খোলার সময় কারাবিধি অনুযায়ী হাজতিদের রোলকল করা হয়। এসময় বন্দী রুবেলের নাম ও তার হাজতি নম্বর- ২৫৪৭/২১ ডাকার পর কোনও সাড়া মিলে নি। তখন থেকেই কারাভ্যন্তরে তাকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। দিনভর সর্বত্র তল্লাশি চালিয়েও তার কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা সুরক্ষিত ভবন থেকে একজন হাজতির হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। তল্লাশির এক পর্যায়ে বাজানো হয়েছে পাগলা ঘণ্টাও। সম্ভাব্য অনাকাংখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশও কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়। সন্ধান না পেয়ে সন্ধ্যায় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান কোতোয়ালী থানায় গিয়ে একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানা মোতাবেক গত ৯ ফেব্রূয়ারি আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার সকাল ছয়টা থেকে কারাভ্যন্তরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সন্ধানে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। থানা কর্তৃপক্ষ জিডি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আইয়ূব উদ্দিনকে। দায়িত্ব পেয়ে তিনিও কারাগারে যান।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে এস আই আইয়ূব উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এখন পর্যন্ত ওই বন্দীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কারাগার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারান্তরীণ থাকাবস্থায় হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেল নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার মীরের কান্দি গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে। এর আগে ২০১৮ সালেও গ্রেপ্তার হয়ে রুবেল কারাগারে এসেছিলেন। গত ৫ ফেব্রূয়ারি গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালাম হাসপাতালে মারা যান। ওইদিন গভীর রাতে হত্যার অভিযোগে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া থেকে সদরঘাট থানা পুলিশ রুবেলকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় গত ৯ ফেব্রূয়ারি আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।











