কাপ্তাই সড়ক চারলেইন করা সময়ের দাবি

2

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

চট্টগ্রামের কাপ্তাই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বহু মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সড়ক প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬৪ বছরেও এই সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। এতে এই সড়কে প্রতিনিয়ত যানজটে কর্মঘন্টা নষ্ট এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সর্বশেষ সড়কের রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর কাটাখালী এলাকায় বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়। এর আগে চুয়েটের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সড়কটি প্রশস্ত ও চার লেইনে উন্নীত করার আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো পাশের ফুটপাত দখল করে ৩-৪ ফুট সড়ক প্রশস্তের কাজ চললেও তাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে না বরং সড়কের উপর হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনা বাড়বে।চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণসহ চারলেইন করার দাবিটি ছিল অন্যতম। প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বাস মালিক সমিতি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই দাবি মানার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নের দৃশ্যমান ও দ্রুত অগ্রগতি দেখতে চায় সংশ্লিষ্ট সবাই। এ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা মানুষের অসন্তোষকে বাড়িয়ে তুলবে। এর আগেও এই সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে নানা দাবি আশ্বাসেই থেকে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাধারন মানুষও কেবল আর আশ্বাস দেখতে চান না, তারা চান কার্যকরী পদক্ষেপ। বিশেষ করে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও চার লেইনে উন্নীত করার দাবিটির বাস্তবায়ন চান তারা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চট্টগ্রামের সম্মানীত উপদেষ্টাবৃন্দ উদ্যোগ নিলে কাপ্তাই সড়ক প্রশস্ত ও চার লেইনের কাজ দ্রæত শুরু করা যাবে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের সাধারন মানুষ।
সড়কে মানুষ মরে, কিছুদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়। ফেসবুকে লেখালেখি হয়। এরপর সবকিছু স্তিমিত হয়ে আসে। আবার আরেকটি দুর্ঘটনা, আরেকজন মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন সড়কেই ঝরে পড়ে! এভাবে আর কত। বেপরোয়া গাড়ি কেড়ে নেয় আমার, আপনার স্বজনের প্রাণ। এর একটা বিহিত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কাপ্তাই সড়ক নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। দুর্ঘটনার পাশাপাশি গোডাউন, রোয়াজার হাট, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন স্টেশনে ব্যাপক যানজটের কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব আছে বৈকি! কাপ্তাই সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত হাটবাজারগুলো স্থানান্তর করা জরুরি। এ ছাড়া কাপ্তাই সড়কের দুই পাশে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে রোগী বিশেষ করে শিশু ও প্রসূতি নিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিভিন্ন চাকরিজীবী শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, ব্যাংকার, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহর থেকে রাঙ্গুনিয়া এবং রাঙ্গুনিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে সঠিক সময়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনে বেগ পেতে হচ্ছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নগদ সরবরাহের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সড়ক প্রশস্তকরণের পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বিআরটিসির বাস, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে লোকাল বাস চলাচল করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে গতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিএনজিসহ সবধরণের যানবাহনে সহনীয় ভাড়া নির্ধারন করে দিতে হবে। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের কোন সুযোগ দেয়া যাবেনা।
গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। চাঁদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা ইতিপূর্বে এই চাঁদের গাড়ির ধাক্কায়, চাপায় মানুষ আহত ও নিহত হয়েছে। বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমনিতে কাপ্তাই সড়কটি সাধারন যাত্রী ছাড়াও পর্যটকদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়েই সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর গাড়ি চলাচল করে নিয়মিত। প্রায় সময় তাদের গাড়িগুলোও নানা বিড়ম্বনার সম্মূখীন হয়। এসবের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো মানুষের সচেতনতা। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদেরকেও রাস্তা পারাপার, চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অভিজ্ঞ চালক দ্বারা যান চলাচল, গাড়ির লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়গুলোর কার্যকর মনিটরিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটানোর সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সব বড় গাড়ি চালককে নিজের এবং অন্য ছোট গাড়ির চলাচলের প্রতি খেয়াল রেখে তবেই গাড়ি চালানো উচিত।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণ ও চার লেইনে উন্নীত করার কাজ শুরু করতে হবে। মানুষ আশ্বাস নয় কাজ দেখতে চান। তারা চান সড়কে শৃংখলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ কাজ করুন। মানুষের আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপ নিন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। এই চলাচলকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে মানুষের সড়ক প্রশস্তকরণ, চার লেইনে উন্নীত করার দাবিসহ যৌক্তিক সব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে, কোন ধরণের ছাড় দেয়ার সুযোগ যেন না রাখা হয়। সড়ক হোক সকলের জন্য নিরাপদ।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট