কাপ্তাই প্রতিনিধি
নানা জাতের আম চাষ করে বেশ পরিচিতি পেয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলা। এমনিতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কাপ্তাই কৃষি সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। এখানে সমতল ভূমি ছাড়াও অধিকাংশ পাহাড়ি জমিতে বছর জুড়ে মৌসুমী ফল, শাক-সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ি বাগানগুলোতে মৌসুমী ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এরমধ্যে অন্যতম হলো আম। নানা জাতের আমের চাষ হয় এসব পাহাড়ি বাগানে। তবে এই প্রথমবারের মতো ভিন্ন জাতের এক প্রকার আমের দেখা পাওয়া গেছে কাপ্তাইয়ের এক সৌখিন চাষির আম বাগানে। এই আমের নাম হচ্ছে ’ব্যানানা ম্যাংগো’। উপজেলা জুড়ে নজর কেড়েছে বিশেষ প্রজাতির এই আম। যা দেখতে অনেকটাই সাগর কলার মতো। দেখতে কলার মতো হলেও এটা কলা নয়, একটু পরখ করলেই বুঝা যায় এগুলি ভিন্ন জাতের আম। যা ব্যানানা ম্যাংগো বা কলা আম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এ আম চাষের স্থানীয় চাষিদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে আসা এজাতের আম স্বাদে ও গন্ধে অনন্য। দেখতে অনেকটা কলার মতো লম্বা, পাক ধরলে দুধে আলতা মেশানো গোলাপি রঙ ধারণ করে, আঁটি চোকা পাতলা, এতে প্রকৃত আমের স্বাদ রয়েছে। সকল ধরনের আমের তুলনায় বিশেষ জাতের এই আমের মিষ্টি তুলনামূলক বেশি। এর বৈশিষ্ট্য হলো- আমটি পাকলে পাকা কলার মতো হলুদ দেখায়। অনেক সময় সিঁদুরের মতো রঙও ধারণ করে। আমটির স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। খোসা একেবারে পাতলা। আমের আঁটি অত্যন্ত পাতলা। আঁশ কম। পরিপক্ব অবস্থায় একটি আমের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। সাধারণত বছরের জুনের শেষ দিকে ও জুলাই মাসের শুরুতে আমটি পরিপক্ক হয়। এ আমের স্বাদ ল্যাংড়া আমের মতো। বর্তমানে এদেশে আমটি তেমন দেখা না গেলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আম বেশ জনপ্রিয়। আমটির আকার, রং, স্বাদেও গুণে বিভিন্ন দেশে আমটি রপ্তানিও হচ্ছে। তবে এদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন আমটির চাষ হচ্ছে। এর চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। তাই বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে বা টবে অনায়াসে আমটি চাষ করা যায়।
ব্যানানা ম্যাংগো বা কলা আম প্রসঙ্গে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আমটি মূলত থাইল্যান্ডের একটি জাত। বাংলাদেশে দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেউ শখে কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এই বিদেশি আম। আমটি বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে। দেশের আবহাওয়ায় এ জাতের আমের ভালো ফলন হয়।
প্রথমবারের মতো ব্যানানা ম্যাংগো চাষ করেছেন কাপ্তাইয়ের শৌখিন চাষী মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। আলাপকালে তিনি জানান, তার শখের বাগানে তিনি বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করে থাকেন। তিনি ব্যানানা ম্যাংগো সম্পর্কে জানার পর তার বাগানে এই গাছের চারা রোপণ করেন। তিনি খাগড়াছড়ি জেলা থেকে পরিচিত এক আমচাষীর কাছ থেকে এই ব্যানানা ম্যাংগোর চারা সংগ্রহ করে তার বাগানে রোপণ করেন। প্রথমে তিনি প্রায় ১০-১২টি চারা রোপণ করেন দুই বছর আগে। এ বছরই প্রথম তার বাগানে ব্যানানা ম্যাংগো জাতের প্রতিটি গাছে ১৪-১৫টি করে আম ধরেছে। তিনি জানান, তার বাগানে ব্যানানো ম্যাংগো ছাড়াও মিয়াজাকি, রেড আইবারি, আম্রপালি সহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি আম চাষ হচ্ছে। তিনি এতে সফলতা পেলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আমের চাষ করবেন বলে আশা করছেন। এজন্য তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইমরান আহমেদ জানান, প্রতি বছরই কাপ্তাইয়ে নানা জাতের আমের খুব ভাল ফলন হয়ে থাকে। আমরা আশা করছি- এবছরও আমের ভালো ফলন পাওয়া যাবে। কাপ্তাইয়ে নতুন জাতের ব্যানানা ম্যাংগো আমটি চাষ হচ্ছে বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের। আমচাষী মধু মঙ্গলের এমন সফলতা দেখে উপজেলার অন্যান্য চাষীরাও আগ্রহী হবে। তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে উপজেলার আম চাষীদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।