কাপ্তাই প্রতিনিধি
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের হস্তক্ষেপে মুক্তি পেল দোকানে কাজ করা নির্যাতিত ৪ উপজাতীয় শিশু। উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের কেয়াংঘাট এলাকার কিশোর ত্রিপুরা, তার স্ত্রী হ্লাসুইনং মারমা (মিতা) ও নাইউমা চৌধুরীর মালিকানাধীন ভাতের হোটেলে কাজ করতো ওই ৪ শিশু।
উদ্ধারকৃত শিশুরা হলো রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার যৌথ খামার এলাকার সুইজাইউ মারমার ছেলে অংথোয়াইপ্রæ মারমা (১০), অংজাই মারমার ছেলে সুইথুইমং মারমা (১০), কালা মারমার ছেলে পাইসাচিং মারমা (১২) এবং কাপ্তাই উপজেলার ওয়াজ্ঞা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া এলাকার সাইচিং মারমা’র ছেলে হ্লাখ্যাইচিং মারমা (১১)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় কাপ্তাইয়ের ইউএনও মো. রুহুল আমিন চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ এবং ৪১ বিজিবিকে নিয়ে ওই ভাতের হোটেলে অভিযান চালান। এসময় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার ৪ শিশুকে উদ্ধার করেন তারা। পরে শিশুদের পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। এসময় ৩নং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী, ইউপি সদস্য ক্যাপ্রু চৌধুরীসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বুধবার রাত পৌনে ১০ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনারদিন সন্ধ্যার আগে গোপন সংবাদ পাই যে, চিৎমরম ইউনিয়নের কেয়াংঘাটে একটি ভাতের হোটেলে ৪ জন শিশুকে লেখাপড়া করানোর নামে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে হোটেলের কাজ করানো এবং কাজ না পারলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বুধবার সন্ধ্যায় ওই দোকানে গিয়ে শিশুদের সাথে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা পাই। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদেরকে ডেকে এনে ওইদিন রাতেই শিশুদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।
ভুক্তভোগী শিশুরা জানায়, তাদেরকে বাড়িতে যেতে এবং পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতোনা, তাদেরকে দিয়ে ভারী কাজ করাসহ হোটেলের যাবতীয় কাজ করানো হতো। নানা অজুহাতে যখন তখন হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে শরীরে আঘাত করতো। লেখাপড়া করাবে বলে তাদেরকে নিয়ে আসার পর লেখাপড়াতো দূরের কথা, বরং কাজ না পারলে নির্যাতন করতো। তাদের বাবা-মা’কে যেভাবে সাহায্য করার কথা সেভাবে দোকান মালিকরা সাহায্য করতো না। এছাড়াও এই শিশুদের হাতে টাকা এবং মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে তার ভিডিও করে চোর সাজিয়ে থানা পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হোটেলে কাজ করতে বাধ্য করা হতো বলেও মুক্ত শিশুরা জানায়।
এসময় হোটেল মালিক কিশোর ত্রিপুরা, তার স্ত্রী হ্লাসুইনং মারমা (মিতা) কে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। তবে অপর মালিক নাইউমা চৌধুরী এবং হোটেল মালিক হলাসুইনং মারমার মামাত বোন চিৎমরমের বাসিন্দা ববি মারমা গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে শিশুদের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে।
৩নং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী বলেন, শিশুদের অভিভাবক আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি হোটেল মালিকদের তাদের ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু হোটেল মালিক আমাকে জানায়, শিশুদের অভিভাবকদের কাছে আমরা অগ্রিম নেওয়া টাকা পাওনা আছি। তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্যপ্রæ চৌধুরী বলেন, এই হোটেলে শিশুগুলো নির্যাতনের খবর আমার কানে আসে। আমি হোটেল মালিকদেরকে অভিভাবকদের কাছে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম।