কাজীর দেউড়ীতে হোটেল ভাঙচুর-লুটের দায়ে মামলা

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর কাজীর দেউড়ী এলাকায় হোটেলে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও দখলের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ ঘটনাটি ঘটে। পরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের হয়।
মামলাটি দায়ের করেন হামলার শিকার হওয়া দোকানের মালিক আফতাব মাহমুদ (শিমুল)। এতে আটজনকে মূল আসামির পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। গতকাল বুধবার নগরীর কাজীর দেউড়ী এলাকায় গেলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। মামলায় আসামিরা হলেন কাজী আবুল হোসেন রুমি, কাজী জাহেদ হোসাইন (তুষার), কাজী আবিদ হোসেন (কায়েস), লিটন, ইব্রাহিম, এখলাস, রহিমা খাতুন, জহুরাসহ অজ্ঞাত ৮/১০ জন। সকলেই কাজীর দেউড়ী কাজী বাড়ি লেইনের বাসিন্দা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি কাজী আবুল হোসেন রুমি গায়ের জোরে নিরীহ মানুষের জায়গা দখল করা সন্ত্রাসী প্রকৃতির ব্যক্তি হয়। দীর্ঘদিন ধরে শিমুল রেস্টুরেন্ট ও আরোয়া করপোরেশন নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন বাদি আফতাব মাহমুদ (শিমুল)। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের দিন স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভন্ড ফকির কাজী আবুল হোসেন রুমির নেতৃত্বে কাজী বাড়ির মসজিদের সামনে, শিমুল রেস্টুরেন্ট ও আরোয়া করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়ে লুটপাট, দখল ও নৈরাজ্য চালায়। এতে শিমুলের প্রায় ৪০ লাখ টাকার আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, চেকবইসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি লুট করে নিয়ে যায়। বাদির সাথে আসামিদের কয়েকজনের পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় দীর্ঘদিনের জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেওয়ানী আদালতে মোট ২২টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও কাজী আবুল হোসেন রুমি নিজেকে কাজী বাড়ী মসজিদের মোতোয়াল্লী হিসেবেও এলাকায় দাবি করিলেও তার দাবির সমর্থনে কোনো কাগজপত্র নেই এবং মসজিদ পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন কমিটি রয়েছে। কিন্তু রুমি নিজেকে মোতোয়াল্লী দাবি করে কাজী বাড়ীর অন্যান্য ওয়ারিশদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি জবর দখল করার পাঁয়তারা করছে।
এদিকে হামলার বিষয়টি স্বীকার করে বিসমিল্লাহ ইলেক্ট্রিকের দোকানি মো. জাকির হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, গত ৫ আগস্ট আবুল হোসেন রুমির নেতৃত্বে শিমুল হোটেলে হামলা হয়েছে। এ সময় আমার দোকানেও হামলা চালায় তারা। আমাকে বেধড়ক মারধর করায় আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। পরে আমি যাতে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিই, সে জন্যেও আমাকে হুমকি দেয় আবুল হোসেন। তার নিজস্ব কিশোর গ্যাং আছে। তার বিরুদ্ধে কিছু হলেই তাদেরকে দিয়ে মারায়। আমার মেডিকেল রিপোর্টসহ সবকিছু থাকা সত্তে¡ও কিছু করতে পারছি না। আমি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
মামলার অভিযুক্ত কাজী আবুল হোসেনকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে ছেলে কাজী জাহেদ হোসাইন (তুষার) কে ধরিয়ে দেন। এ সময় তিনি বলেন, এ মামলা সম্পর্কে আমি জানি, মামলার নম্বর ১৮৮০ তো, আজকে মামলার ডেইট ছিল। আমি খবর নিয়ে আসছি।
বাদি আফতাব মাহমুদ শিমুলের ছোটো ভাই এডভোকেট ইয়াছিন মাহমুদ তানজিল পূর্বদেশকে বলেন, গত ৫ আগস্ট আমাদের দোকানে হামলা চালিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় তারা। এরপরও তারা ক্ষান্ত হননি। আসলে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস ছিল শুধু আমার ভাই শিমুলের। যার ফলে শিমুলের পিছনে আবুল হোসেন ও তাঁর বাহিনী সবসময় লেগে আছে। আবুল হোসেন ২০১৬ সালে চলাচলের উপর গাড়ি পার্কিং করে রাখায় সকলের যাতায়াতে অসুবিধা করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ হয়। কিন্তু তিনি আদালতের শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় মুচলেকা দিয়ে আসতে হয়েছে। বর্তমানে আমার ভাইসহ পরিবারের বিভিন্ন জনকে হুমকি দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করাচ্ছে। এ ঘটনায় আমরা তাৎক্ষণিক থানায় মামলা করতে গেলে, থানার অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় পুলিশি সহায়তা নিতে পারিনি। তাই পরবর্তীতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই।