নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্টের উত্তাল সময়ে কিভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে স্বৈরাচারের দোসররা সে ঘটনা তুলে ধরছিল শহীদ পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সকাল থেকেই আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শহীদ পরিবারগুলোর উপস্থিতি এবং তাদের হৃদয়বিদারক বক্তব্যে অনুষ্ঠানে থাকা সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে যান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা যখন তাদের হারানোর বেদনা ব্যক্ত করছিলেন তখন উপস্থিত অতিথিদের চোখেও পানি চলে আসে।
শহীদ ইঞ্জিনিয়ার ওমর বিন আবছারের মা রুবি আক্তার বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম ছেলেকে নিয়ে। বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে, দেশকে গড়বে। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণের আগেই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন। তেমন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, শুধু চাই সঠিক বিচার। যেন আর কোনো মা আমার মতো সন্তান হারানোর কষ্ট না পায়।’
শহীদ ইসমামের বড় ভাই মুহিবুল হক জানান, ‘আমার ভাই মাত্র ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। লোহাগাড়ায় একটা দোকানে চাকরি করতো, পরে ঢাকায় গিয়ে জুয়েলারির দোকানে কাজ নেয়। আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ৭ আগস্ট বিকেলে সে মারা যায়।’ তার কণ্ঠ ধরে আসছিল, চোখে জমছিল অশ্রু।শহীদ মো. ইউসুফ (জুনায়েদ)-এর স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে আমার স্বামী মারা যায়। মৃত্যুর আগেও আমাদের সাথে কথা হয়েছিল। এখন আমার সন্তানরা যখন বড় হবে, আমি তাদের কী উত্তর দেব? তারা যদি জানতে চায়, কেন তাদের বাবা আর ফিরে আসেনি? আমি কাকে গিয়ে দুঃখের কথা বলব?’
শহীদ মোহাম্মদ ফারুকের স্ত্রী সিমা বেগম, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন এবং অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যরাও তাদের আপনজনদের হারানোর বেদনা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই তখন এক অদ্ভুত শোকের আবরণে ঢেকে গিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এই শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। তাদের স্মরণেই আমরা একটি মানবিক, ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ব। শহীদদের আত্মত্যাগের কথা জাতি কখনো ভুলবে না।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সবাই যখন শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করছিলেন, তখন পুরো মিলনায়তনে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যদের চোখ থেকে অশ্রæ ঝরছিল, একই সঙ্গে উপস্থিত অতিথিদেরও চোখ ছিল ভেজা। এটি যেন ছিল এক শোকের সমুদ্র, যেখানে হারানোর বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছিল পুরো মিলনায়তন।