নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সার্জেন্ট দ্বীন মোহাম্মদ দিনার। তিনি স্ত্রীর নামে একটি এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করেন। পরে এই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করেন মাইক্রোবাস হিসেবে। ২০২২ সাল থেকে তিনি সেটি ব্যবহার করে আসছেন। মূলত এ্যাম্বুলেন্সের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও ট্যাক্স-টোকেন ফি কম হওয়াতে তিনি এ প্রতারণার আশ্রয় নেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্ট মেট্রো-২ কার্যালয়ে পরিচালনাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ধরা পড়ে।
দুদক জানায়, কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন সুবিধা আদায় করতে এই প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। যার সঙ্গে বিআরটিএ’র বেশ কয়েকজন দালালও জড়িত রয়েছে। অভিযানের বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক সোবেল আহমেদ বলেন, সহকারী পরিচালক এমরান হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো-২ সার্কেল উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী ও সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থীর কার্যালয়েও পরিদর্শন করেন দুদক টিম।
জানা গেছে, অভিযানে এ্যাম্বুলেন্সকে মাইক্রোবাস বানিয়ে ব্যবহারের বিষয়টি ট্রাফিক সার্জেন্ট দ্বীন মোহাম্মদ দিনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক টিম। সেখানে দেখা গেছে, সার্জেন্ট মোহাম্মদ দিনারের স্ত্রীর নামে (তানহা আক্তার মিলি) গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটির রেজি. নম্বর- চট্ট মেট্রো চ ৭১-০৭১৬। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের বিষয়টি দুদক টিমের কাছে ট্রাফিক সার্জেন্ট দিনার স্বীকার করেন। এছাড়া বিআরটিএর দাপ্তরিক কাজে দুর্নীতি ও সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র মেট্রো-২ সার্কেল, চট্টগ্রাম জেলা অফিস ও বিভাগীয় অফিসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে গ্রাহকসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন কাউন্টারের যাবতীয় কার্যক্রম নজরদারি করে এবং সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে।
অভিযান পরিচালনাকালে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া, গাড়ির ফিটনেস সনদ ইস্যু বা রুট পারমিট দিতে সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী দালালদের যোগসাজশে দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। সর্বনিম্ন দুই হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গুণতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের- এমন বিষয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল জড়িত রয়েছে থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যাদের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছেন এরকম গত একবছরের ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করার পর এ বিষয়ে পরিস্কার হওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আকারে কমিশন বরাবরে পাঠানোর।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, দুদক যেসব অভিযোগ নিয়ে যেসব তথ্য চেয়েছেন সেগুলো আমরা সরবরাহ করেছি। এ্যাম্বুলেন্সের ধরণ পরিবর্তনের অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। ওই মালিকের জবানবন্দি নিয়েছেন তারা। এরপরও আমরা সব তথ্য-উপাত্ত দিয়েছি। পাশাপাশি অন্যান্য কাগজপত্রাদি চাওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা প্রদান করেছি যাচাই-বাছাই করে তারা তাদের মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।