কর্ণফুলীতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

1

কর্ণফুলী প্রতিনিধি

কর্ণফুলীতে বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৫ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর গ্রামে সৈন্যারটেক এলাকায় গোল্ডেন সন লিমিটেড কারখানায় গতকাল রবিবার সকাল থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শত শত শ্রমিক কারখানার প্রধান ফটকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। এ সময় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা সড়কের উপর বসে ছিলেন। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সকাল পৌনে ৯ টায় সেনাবাহিনীর একটি দল এসে শ্রমিকদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে ৩ ঘণ্টা পর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় সিএমপি কর্ণফুলী থানা পুলিশের একটি দল এসে প্রমিকদের সাথে কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ ইসমাঈল কারখানাটিতে প্রায় ১৫ বছর কাজ করছেন। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, শ্রমিকদের গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর বাইরেও অনেক শ্রমিক আছে, যারা কয়েকমাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। আমরা সারা মাস কাজ করেও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারব না কেন?
তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকরা বছরের পর বছর এখানে কাজ করছে। তাদের বেতনবৃদ্ধিও করা হচ্ছে। বেতন বৃদ্ধির কথা বললেই তারা চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।
কারখানার আরেক শ্রমিক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা কোন মাসেই ঠিকমতো বেতন পাই না। মাসের শুরুতে বেতন চাইতে গেলে বলে ‘সময় হলে বেতন পাবে, না হলে চাকরি থেকে চলে যাও।’ আমরা কোথায় যাব? চাকরি করেও বেতন পাই না। পরিবারকে জবাব দিতেও পারি না।
বিভিন্ন দাবি আদায়ে শ্রমিকরা এই আন্দোলন থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন শ্রমিকরা। তার মধ্যে রয়েছে, আগের সকল বকেয়া পরিশোধ করা, শ্রমিকের বেতন বাড়ানো, ১-১০ তারিখের মধ্যে পূর্ণ বেতন পরিশোধ, এছাড়া কোনো শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে, তার প্রাপ্য টাকা সরকারি নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা।
কারখানার এক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা কারখানায় চাকরি করি পেটের দায়ে। তারা রমজান মাসেও আমাদের উপর চাপাচাপি করেছে। আমরা ইফতার করার সময় পর্যন্ত পাইনি। কথায় কথায় আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে আমাদের চলে যেতে বলে। পরে কারখানার সামনে কান্নাকাটি করলে, তারা আবার চাকরিতে ফিরিয়ে নেয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, আমরা আমাদের পাওনা বেতন ও নায্য অধিকার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছি। কারখানা কর্তৃপক্ষ বা কারো ক্ষতি করতে নয়।
কারখানার স্টোর সেকশনের এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্তৃপক্ষ কেন আমাদের বেতন দিতে পারছে না? কাজ তো থেমে নেই, শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ৫ ঘণ্টা অভারটাইম করানো হচ্ছে। তারপরেও কেন সঠিক সময় বেতন দেবে না?
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করে শ্রমিক সালাহউদ্দীন বলেন, আমরা পেটের দায়ে মাঠে নেমেছি। আমরা যারা আন্দোলনে এসেছি, তাদের চাকরি হারাতে হতে পারে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সহায়তা করুন এবং চাকরির নিরাপত্তা দিন।
এ বিষয়ে গোল্ডেন সন লিমিটেড কারখানার মানব সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নোমান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরিফ পূর্বদেশকে জানান, কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই দুই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে, এমন আশ্বাসে শ্রমিকরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।