মুহাম্মদ আয়াজ, কর্ণফুলী
কর্ণফুলীতে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলাজুড়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ও সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বেড়েছে নিষিদ্ধঘোষিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তৎপরতাও। এ নিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাও জনমনে নানা প্রশ্ন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহে উপজেলার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু, চরপাথরঘাটা, শিকলবাহা, জুলধা ও বড়উঠান এলাকায় একাধিক চুরি, ছিনতাই ও সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। চুরির হাত থেকে বাদ যায়নি কর্ণফুলীর ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস এমনকি উপজেলার এসিল্যান্ড অফিসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানও। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিয়ে বাড়িতে অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
গত ২৯ অক্টোবর মধ্যরাতে উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) অফিসের তালা কেটে চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে উপজেলাজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ১২ অক্টোবর রাতে বড়উঠান ইউপিতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিয়ে বাড়ির লোকদের অস্ত্র ঠেকিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ ঘটনার চারদিন পর ১৭ অক্টোবর দিবাগত-রাতে শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষের তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। তার ঠিক চারদিনের মাথায় ২১ অক্টোবর জুলধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভেনটিলেটর ভেঙে কম্পিউটার ও ডেক্সটপ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মামলা হলেও এখনো চোরকে শনাক্ত কিংবা চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পর পর এতোগুলো চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনায় থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাদক কারবারি ও ছিনতাইকারীর রাজত্বও। রাত হলেই শাহ আমানত সেতুর ওভারব্রিজের পর থেকে ১ম সিঁড়ি ও সেতুর নিচে প্রকাশ্যে চলে মাদক বিক্রি ও সংঘবদ্ধ ছিনতাইয়ের ঘটনা। শুধু নতুন ব্রিজ এলাকা নয়, ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে পিএবি সড়ক। ফকিরনীর হাট রাস্তার মাথা থেকে ফাজিলখাঁর হাট এলাকা পর্যন্ত সড়কে রাত হলেই প্রকাশ্যে চলে ছিনতাইয়ের ঘটনা।সক্রিয় হয়ে ওঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। সম্প্রতি কর্ণফুলীর একটি বিয়ের ক্লাবে ৮/৯ জনের একটি গ্রুপ ‘জয় বাংলা’ সহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় নেটিজেনরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এলাকায় এখন যেভাবে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে যাচ্ছে রাতে দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরতেও ভয় লাগে। তারা বলছেন, পুলিশের জোরালো পদক্ষেপ ছাড়া এলাকায় চুরি, ছিনতাই দূর করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম জানান, চুরির ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে, আশা করি খুব শিঘ্রই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। আর আমরা ডাকাতদলের সদস্যদের শনাক্ত করতে পারছি, কিন্তু তদন্তের কারণে বিষয়টি পুরোপুরি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। বিয়ের ক্লাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্লোগান দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যাদেরকে ভিডিওতে স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তারা গা ডাকা দিয়েছে। তবে তাদেরকেও আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে জনগণ সহযোগিতা করলে আশা করছি খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, চোর ও ডাকাতদের শনাক্ত এবং তাদের আটকে খুব জোড়ালোভাবে কাজ করছে পুলিশ। এর মধ্যেই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হবে।











