এ মুহূর্তে বৈশ্বিক মহামারির নাম করোনা ভাইরাস। বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দেড়লাখ মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছে সাত হাজারের অধিক। সেই অনুপাতে বাংলাদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) ১৭ জন। মৃত্যু ঘটেছে একজনের। তার বয়স ৭০-এর বেশি। রাজধানীর বাসাবোর ওই বাসিন্দা বিদেশ ফেরত নন। তবে বিদেশ থেকে আসা সংক্রমিত এক আত্মীয়ের সান্নিধ্যে যাওয়ার পর তিনি আক্রান্ত হন। তার আগে থেকেই ডাইবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা ও ফুসফুসে সমস্যা ছিল। জানা যায়, মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির হৃদযন্ত্রে একবার স্টেন্টিংও হয়েছিল তার। মৃত্যুর খবর ও করোনায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধির খবরে আমরা যতটুকু না আতঙ্কিত, এরচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ভাইরাস নিয়ে আজগুবি সংবাদ পরিবেশন। আমরা মনে করি, আতঙ্ক সৃষ্টির হওয়ার মত যেকোন ধরনের অপপ্রচার থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এ মুহূর্তে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। সচেতনতাই এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সরকারও ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মাদারীপুর জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ও বাজারে মানুষের সমাগমের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সামরিক বাহিনীর আওতায় আনাসহ নানা পদক্ষেপ আমাদের আশাবাদি করেছে। তবে সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। এরপর পর্যায়ক্রমে তা চীনের অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি দেড় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৭ জন শনাক্ত হয়েছে। ক্রমেই রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসাবাড়িতে বসে কাজ করতে বলেছে। স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের অনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মানছেন না। তাদের মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাসটি স্থানীয় পর্যায়ে ছড়াতে শুরু করেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হলো ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা, প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, ঘরে ফিরে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কিছু খাওয়া কিংবা রান্নার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে, ডিম কিংবা মাংস রান্না করার আগে ভালোভাবে সিদ্ধ করা, ময়লা কাপড় দ্রæত ধুয়ে ফেলা, নিয়মিত ঘর এবং কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখা এবং অপ্রয়োজনে ঘরের দরজা-জানালা খুলে না রাখতে বলা হয়েছে। পরামর্শগুলো যথাযথভাবে আমাদের পালনীয়। করোনা ভাইরাস যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে আগাম জরুরি ব্যবস্থা নেয়াও কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা এখন এমন এক সংবেদনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছি, সংক্রমণ পরিস্থিতি যেকোনো দিকে যেতে পারে। ভাইরাসটি মহামারি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে ডাক্তার-নার্স ও চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নইলে এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে কোনো হাসপাতালেই পিপিই নেই। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরও কোথাও পিপিই পাঠানো হয়নি। এ অবস্থায় চিকিৎসক ও নার্সদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কারণ পিপিই ছাড়া কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে তিনিও আক্রান্ত হবেন। আশার কথা, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পিপি প্রেরণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, চীনের অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আতঙ্ক বা ভীতিকর প্রচারণা নয়, করোনা ভাইরাসের হুমকি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সব দেশকে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ একযোগে ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জনসচেতনতা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।