প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ভোটের দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলে দূর-দূরান্ত থেকে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন না। অনেকে প্রতিবাদস্বরূপ ভোটকেন্দ্রেই আসেন না। সে কারণে আমরা চিন্তা করেছি, ভোটের দিন সীমিত আকারে যানবাহন চালু রাখার। তবে যান চলাচল পুরোপুরি উন্মুক্ত হবে না। আমরা সীমিত আকারে যান চলাচল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও কমিশন, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও কল-কারখানাগুলো ভোটের দিন (২৯ মার্চ) দুপুর ১২টা পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত নির্বাচিনী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন পেছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। এই পর্যন্ত যে পরিস্থিতি আছে তাতে করে জাতীয় পর্যায়ে কোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি এবং নির্বাচন বন্ধ করার কোনো পরিস্থিতি আসেনি। যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটা পরে দেখা যাবে।
ভোটারদের নির্দ্বিধায় ভোটকেন্দ্রে আসার আহব্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবেন। এখানে আপনাদের কোনো বাধা দেওয়া হবে না। ইভিএমের মাধ্যমে একজন ভোটার একবার ভোট দিলে আরেকবার দিতে পারবেন না। ইভিএম মেশিন তাকে গ্রহণ করবে না। জাল ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া নির্বাচনে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনো স্বার্থ নেই। তারা অবাধ নির্বাচনের পক্ষপাতী।’
তিনি বলেন, নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে না, তাদের বের করে দেয়া হয়, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। এই অভিযোগগুলো আমরা বিভিন্নভাবে পর্যালোচনা করে জানতে চাই, এগুলো সঠিক কিনা। কারণ পোলিং এজেন্ট হচ্ছে নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাদের সবচেয়ে নির্ভরশীল ব্যক্তি। বুথে কোনো অনিয়ম হলে প্রতিরোধের ক্ষমতা তাদের দেওয়া থাকে। সেই এজেন্টদের নিজ দায়িত্বে নির্বাচন কেন্দ্রে আসতে হবে। যখন একজন এজেন্ট নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেন, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ দেবেন।
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে না দেওয়া কিংবা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে আমরা দেখি, অধিকাংশ কেন্দ্রে এজেন্টই যায়নি। কেন্দ্রে যদি এজেন্ট না যায়, তাহলে আপনাদের-আমাদের কিছু করার থাকে না। প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ, যোগ্য এজেন্ট কেন্দ্রে পাঠাবেন। এটা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমাদের দরকার। এজেন্ট যাওয়া-না যাওয়া, সেটা প্রার্থী ও এজেন্টদের বিষয়। ভেতরে এজেন্ট গেলে বের করে দেওয়ার অভিযোগ থাকে। কিন্তু গত দু’বছরে এমন একটা অভিযোগও নেই যে কোনো এজেন্ট বলেছে, আমি ভেতরে ঢোকার পর আমাকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কঠোর আইনি ব্যবস্থা আছে এবং অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। বলতে হবে, কে কোথায় বের করে দিয়েছে কিংবা নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছে কারা? আমরা এটা সিরিয়াসলি চাই যে এজেন্টরা কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করুক।
এর আগে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খানসহ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, নগরের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।