কয়েক বছরেই অনেক চাকরি ‘খেয়ে ফেলবে’ এআই

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে অ্যামাজনের বস অ্যান্ডি জ্যাসি সতর্ক করে বলেছেন, এ প্রযুক্তির কারণে আগামি কয়েক বছরের মধ্যে কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমে যাবে। গত মঙ্গলবার কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক মেমোতে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যেখানে জ্যাসি কর্মীদের ‘এআই নিয়ে আগ্রহী হতেও’ উৎসাহিত করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। গোটা বিশ্বে দ্রুত চাকরি হারানোর আশঙ্কার মধ্যে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের এআই ব্যবহারের পরিকল্পনা প্রকাশ করল প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন।
জ্যাসি বলেছেন, তিনি আশা করছেন, কাজের ‘দক্ষতা বাড়াতে’ সহায়তা করবে এআই, যার ফলে কোম্পানির পক্ষে তাদের কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি লিখেছেন, ‘আজ কর্মীরা যেসব কাজ করছে, সেখানে অনেকগুলোর জন্যই ভবিষ্যতে কম কর্মীর প্রয়োজন হবে এবং আমাদের অন্য ধরনের কাজে আরও বেশি মানুষের প্রয়োজন পড়বে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সঠিক প্রভাব কী হবে তা বলা কঠিন। তবে আমরা ধারণা করছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোম্পানির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের মোট কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমে যাবে’। খবর বিডিনিউজের
গত কয়েক বছরে বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন কোম্পানি এআইতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করছে। কারণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে এখন আগের চেয়ে অনেক সহজে চ্যাটবটের মাধ্যমে কম নির্দেশনাতেই কোড, ছবি ও লেখার মতো জিনিস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
নতুন এসব এআই টুলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রযুক্তি প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, এসবের ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে অফিসভিত্তিক বা এন্ট্রি-লেভেলের বিভিন্ন চাকরির বেলায়।
গত মাসে এআই স্টার্টআপ ‘অ্যানথ্রোপিক’-এর প্রধান নির্বাহী দারিও আমোডেই সংবাদ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, এআইয়ের কারণে অফিসের সাধারণ বা প্রাথমিক স্তরের অনেক চাকরি, এমনকি এই স্তরের অর্ধেক চাকরি হারিয়ে যেতে পারে।
স¤প্রতি এক পডকাস্টে এআই নিয়ে সতর্কতা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন ‘এআই গডফাদার’ জেফ্রি হিন্টন। মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগলে বহুবছর কাজ করেছেন তিনি। এআইয়ের কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারালেও এই প্রযুক্তি নতুন ধরনের কাজ তৈরি করবে এমন যুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে হিন্টন বলেছেন, ‘এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি। এআই যদি সব সাধারণ মানুষের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে পারে তবে এটা নতুন কী ধরনের চাকরি তৈরি করবে? আর তেমন কোনো চাকরি পেতে হলে আপনাকে খুবই দক্ষ হতে হবে। কারণ যে কাজটি এআই করতে পারবে না সেই কাজটিই করার সুযোগ থাকবে আপনার’।
গত বছরের শেষদিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষকে চাকরি দিয়েছে মার্কিন ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন। এসব কর্মীদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেন, যেখানে ওয়ালমার্টের পর দেশটির দ্বিতীয় বড় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবস্থান করছে অ্যামাজন।
তবে এর মধ্যে অনেক কর্মী অ্যামাজনের ই-কমার্স গুদামে কাজ করেন এবং কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী অফিসভিত্তিক বিভিন্ন পদে করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
কোম্পানির ‘প্রতিটি কোণায়’ এআই ব্যবহার করছে অ্যামাজন
মেমোতে জ্যাসি বলেছেন, ‘প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করছে অ্যামাজন। তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে রুটিন কাজ যেমন কেনাকাটা ও প্রতিদিনের ঘরের কাজও করতে পারবে এই প্রযুক্তি। এসব এজেন্টের অনেকটাই এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে এগুলো আসবে না ভেবে ভুল করবেন না। কারণ, এগুলো আসছে, আর খুব দ্রæতই আসছে’।
তিনি আরও বলেছেন, যারা এসব পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করবে, তারা কোম্পানিতে ‘ভালো অবস্থানে’ থাকবেন।