চট্টগ্রামে ছাত্রলীগে কমিটি গঠন মানেই বিতর্ক। জেলা কিংবা উপজেলায় হোক। নগরের আওতাধীন ইউনিট, সবখানেই ঠাঁই পাচ্ছে বিবাহিত, অছাত্র, অস্ত্রবাজ, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামিরা। দাগি বিতর্কিতদের কমিটিতে রেখেই নিজেদের পক্ষ ভারী করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
এসব কমিটি গঠনের পরপরই সড়ক অবরোধসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বিগত তিনদিন ধরে নগর ছাত্রলীগের ১৩টি ইউনিটে কমিটি-পাল্টা কমিটি গঠন নিয়ে আবারো বেসামাল নগর ছাত্রলীগ। কমিটি গঠনে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেয়ায় ঘরে-বাইরে সমালোচিত নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ফেব্রূয়ারিতেও পাঁচটি থানা কমিটিতে অস্ত্রবাজ ও বিএনপি পরিবারের সন্তানদের নেতা বানিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন ইমু-দস্তগীর।
জানা যায়, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের পর ইমু-দস্তগীরের সমালোচনায় মুখর আছেন খোদ নওফেল অনুসারীরাই। আবার নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারী নগর ছাত্রলীগের নেতারা কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রীতিমত পাল্টা কমিটি ছুঁড়ে দিয়েছেন।
বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দেয়া হলেও দুইজনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ডা. মনজুর মোর্শেদ অসীম পূর্বদেশকে বলেন, কমিটিতে আসা অনেকের নামে বির্তক আছে বলে শুনছি। যাদের নামে অভিযোগ আসছে, সেগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলেছি। তারা অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবেই ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। অনেক দিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এখন যদি নগর ছাত্রলীগের কমিটি হয় তা হবে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট। তার আগেই হয়তো ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে কিছু নেতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি পূর্বদেশকে বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যেহেতু আমি ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কেউ নই। শুধু এটুকু বলবো সব মহিউদ্দিন ভাই দেখছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আহব্বায়ক বানানো হয়েছেন কাজী নাঈমকে। নাঈমের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছেঁড়ার ভিড়িও ভাইরাল হয়েছিল। নাঈম সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার অভিযোগে একবার গণপিটুনীর শিকার হয়েছিলেন। চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম নিয়মিত ছাত্র নন এবং একটি শপিং মলের তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। চকবাজার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রওনক চমেক হাসপাতালে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। ১৬নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে সাদ্দাম হোসেন ইভান। যদিও কমিটি অনুমোদনে তার নাম শুধু সাদ্দাম হোসেন লিখা হয়েছে। ইভানের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে। নানা সময় চকবাজার এলাকায় বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসা ইভানকেই চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি বানানো হয়েছে।
বাকলিয়া ১৭নং ওয়ার্ডে এক সহ-সভাপতি বিবাহিত হলেও তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। বায়েজিদ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক রুবেল খান ধর্ষণ মামলার আসামি। রুবেল বিবাহিত বলেও জানা গেছে। পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন রবিন হত্যা মামলার আসামি। হামজারবাগ এলাকার চাঞ্চল্যকর নুরুল আলম রাজু হত্যা মামলার প্রধান আসামি রবিন। এর আগে গত বছরের ফেব্রূয়ারি মাসে গঠন করা ডবলমুরিং থানায় রাকিব হায়দার নামে একজন অস্ত্রবাজকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একইভাবে চান্দগাঁও থানাতেও সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে বিএনপি ঘরানোর একজনকে।
মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল পূর্বদেশকে বলেন, এ কমিটি সাত-আট বছরের পুরানো। ইমু-দস্তগীর এর আগেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কমিটি দিয়েছে। তখনও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। তারা বলেছিল আর কমিটি দিবে না। এখন দেখা গেল আবারো বিতর্কিতদের নিয়ে ‘মাই ম্যান কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। যে কারণে আমরা সাংগঠনিক ও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা ছেলেদের রাজনীতি করার সুযোগ দিতে চাই। নেতারাও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় পাল্টা কমিটি দিয়েছি।