কমছে বৃষ্টির দাপট

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার নির্ধারিত সময়ের খানিকটা আগেই স্থলভাগে প্রবেশ করেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে এসে মৌসুমি বায়ুর ঘাঁড়ে সওয়ার হয়েছে সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ। ফলে কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে অব্যাহত রয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ। তবে গতকাল সোমবার বিকাল থেকে চট্টগ্রামে কমে এসেছে বৃষ্টির দাপট। সিলেট অঞ্চল বাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে তা আরও কমবে বলেও আভাস দেয়া হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবের সাথে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণেই টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এখন নিম্নচাপ কেটে যাওয়ার পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু সাগরে মাঝারি অবস্থায় সক্রিয় রয়েছে। এতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে। মঙ্গলবার থেকে আকাশে সূর্যের দেখা মিলতে পারে। তারপর কয়েকদিন আবার ভ্যাপসা গরম থাকবে। বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। কোরবানির ঈদের সময়ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড করা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গতকাল সোমবারও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত ছিল। চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন অধিকাংশ জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এলেও গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ায়। কক্সবাজারেও শতকের ঘর ছাড়িয়ে একশ’ ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সোমবার জুন মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সদ্য বিদায়ী মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। এপ্রিলের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তপ্ত মাস মে। সেই মাস বৃষ্টিতে ভিজেছে পুরো দেশ। চলতি জুন মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপ হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপও হতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বা এর চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে। তবে সেটা নির্ভও করছে একটা অনুঘটকের ওপর। সার্বিকভাবে জুন মাসে এক বা দুটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবার বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর- পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে স্বল্পমেয়াদে বন্যা হতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে এ মাসের মাঝামাঝি। কিন্তু এর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কতটা পড়বে তা এখনও অনিশ্চিত। কারণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, নি¤œচাপের বড় প্রভাব না-ও পড়তে পারে। আর তা যদি না পড়ে; তবে বৃষ্টি বেশি না-ও হতে পারে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে পাঁচশ’ ২৩ মিলিমিটার। এর পরই বেশি বৃষ্টি হয় জুন মাসে চারশ’ ৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। মে মাসে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয় দুইশ’ ৯৮ মিলিমিটার। কিন্তু এবারের মে মাসে হয়েছে চারশ’ ৮৬ মিলিমিটার। গত ৩১ মে সিলেটে চারশ’ পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটা রেকর্ড।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এবার মে মাসের শুরুটা হয়েছিল তাপপ্রবাহ দিয়ে। ওই মাসে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ১০ মে চুয়াডাঙ্গায় সেই তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের যতটা অংশজুড়ে মে মাসে তাপপ্রবাহ চলেছিল, তা এ বছর আগে হয়নি। কিন্তু মাসের মাঝামাঝি এসে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এর মধ্যে গত ২৭ মে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি এক পর্যায়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ২৯ মে এর প্রভাবে প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বৃষ্টি লেগেই আছে। এখন যে বৃষ্টি চলছে, তার কারণ অবশ্য দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়া মৌসুমি বায়ু। দেশে এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত সাত দিন আগে গত ২৪ মে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। নিম্নচাপের প্রভাব কমে যাওয়ার পর থেকে বৃষ্টির কারণ হলো, মৌসুমি বায়ুর অধিক সক্রিয়তা। এটিই আজ পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে যেতে পারে বলেই আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে।