নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থনীতির হৃৎপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক কর্মতৎপরতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংসহ জেটি ও ইয়ার্ড সুবিধাদি স¤প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
ইতোমধ্যে বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল এনসিটিতে নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সিডিডিএল গত তিন মাসে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩,৪২,৬৪৯ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১,৭৫৪ টিইইউস বেশী। এই সময়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এ ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে এনসিটিতে মোট জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৭৮টি, বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬টি জাহাজ বেশী হ্যান্ডলিং হয়েছে। জাহাজ হ্যান্ডলিং এর বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এনসিটিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের কন্টেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ এবং প্রবৃদ্ধি এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
একইভাবে, চলতি অর্থবছরে গত তিনমাসে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে চট্টগ্রাম বন্দরে সামগ্রিকভাবে কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯,২৭,৭১৩ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১,০১,১৮৫ টিইইউস বেশী, প্রবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।একইভাবে বিগত তিনমাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়েও হয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। এ সময়কালে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩,২৯,১৯,৯৬৬ মেট্টিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০৩১টি। বিগত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করেছে। পাশাপাশি দেশে পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমস্ এর কলম বিরতি এবং শাটডাউনের মতো ঘটনায় বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের একান্ত সহযোগিতায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে এগুলো তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্পের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবেও চট্টগ্রাম বন্দরের সকল অর্জন ইতিবাচক সূচকে রয়েছে। ২০২৫-২৬ পঞ্জিকাবর্ষে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মোট নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বমোট ২৫,৬৩,৪৫০ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ১,২১,৬২৫ টিইইউস বেশী বা প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
একইভাবে বিগত নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়েও হয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। এ সময়কালে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০,২৭,০৪,২৫৯ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১৬১ টি। বিগত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, বন্দরের আধুনিকায়ন, দক্ষতার সাথে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জাহাজের গড় অবস্থানকাল হ্রাস এবং জেটি ও ইয়ার্ড সুবিধাদি স¤প্রসারণসহ নিরাপদ ও দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং জাতীয় আমদানী-রপ্তানীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করাই হল বন্দরের অভিলক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বন্দরের সকল স্টেকহোল্ডারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রæতিতে এমন সাফল্যের জন্য দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে।











