কঠোর হাতে দমন করতে হবে সন্ত্রাসীদের

3

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ বেড়ে গেছে সন্ত্রাসী তৎপরতা। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ গত ১৩ জুন সকালে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চন নগর পাহাড়ি এলাকায় নিজেস্ব বাগানে কাজ করার সময় তিনজন কৃষককে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পরিবারের কাছে ৫লাখ টাকার মুক্তিপন দাবি করে। এখবর পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল অভিযান পরিচালনা কওে তাদেও উদ্ধার করে। সূত্র জানায়, অপহরণকৃত ব্যক্তি হচ্ছেন হারুন উর রশীদ ও তার দুইি ছেলে মো. নোমান ও মো. নঈম। তারা কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের সওদাগর পাড়ার অধিবাসী। প্রতিদিনের ন্যায় পিতা তার দুই ছেলেকে নিয়ে সকালে নিজস্ব লেবু বাগানে যান। সেখানে বাগানের কাজ করার সময় হঠাৎ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আটজন সন্ত্রাসী তাদেও অপহরণ করে গভীর পাহাড়ে নিয়ে যায়। এসময় তারা কৃষক হারুনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপন দাবি কওে এবং টাকা যোগাড় করার জন্য হারুনকে ছেড়ে দিয়ে দুই সন্তানকে রেখে দেয়। এতোমধ্যে সেনা বাহিনীর চন্দনাইশ ক্যাম্প গোয়েন্দার মাধ্যমে এখবর পাওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ক্যাপ্টেন খালিদ হাসান মুগ্ধেও নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের একটি চৌকস দল পটিয়া জোনের কাঞ্চন নগর পাহাড়ি এলাকার প্রায় বিশ কিলোমিটার জুড়ে দিনভর অভিযান পরিচালনা কওে হারুনের দুই ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এজন্য অবশ্যই সেনাবাহিনী প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ জাতীয় ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও পটিয়া ও কাঞ্চননগর পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। পটিয়া শ্রীমা খালের পাহাড়ি অংশে আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে এধরণের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় পশ্চিম এলাহাবাদ শাহসুফি বাড়ির এক কৃষককে পাহাড়িরা অপহরণ করে নিয়ে যায়, এখনও পযৃন্ত তার হদিস পাওয়া যায় নি। এছাড়া লর্ড ছড়ার খিল, এলাহাবাদ, ধোপাচড়ি ইত্যাদি পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদেও তৎপরতা এতো বেমি বেড়ে গেছে, স্থানীয় কৃসকরা তাদেও নিজেদেও লেবু, পিয়ারা, আনারসসহ বিভিন্ন বাগানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সম্প্রতি সেনাবাহিনী যেবাবে তৎপরতা চালিয়েছে, সেভাবে যদি প্রতিদিন সেনা বাহিনীর টহলের বৗবস্থা করা হয় এবয় তা নিয়মিত থাকে তবে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। উল্লেখ্য যে, কাঞ্চননগরের এ পাহাড়ি অঞ্চল সর্ব পূর্ব ও দক্ষিণে যুক্ত হয়েছে বান্দরবানের সাথে। ধারণা করা হচ্ছে, বান্দরবানের শান্তিবাহিনীর কোন কোন বিচ্ছিন্ন দল কাঞ্চননগর ও পটিয়ায় পাহাড়ি এলাকায় এসে অপহরণসহ নানা অপরাধমূরক কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে, এদেরকে কঠোর হাতে দমনের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্বশেষ কক্সবাজার জেলার রামু ও টেকনাফেও বৃদ্ধি পেয়েছে সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ অপহরণের মত ঘটনা। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, রামু, টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অপহরণ তৎপরতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, টেকনাফ অঞ্চলে অপহরণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সাড়ে ১৭ মাসে অন্তত ২৫৪ জন অপহরণের শিকার হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের মানুষ মুক্তিপণের জন্য অপহৃত হচ্ছে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অপহৃতদের মানবপাচারকারীদের কাছে বিক্রি পর্যন্ত করে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়ন এই অপরাধের কেন্দ্রস্থল। অন্তত ১২টি চক্রের শতাধিক ব্যক্তি এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত, যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ডাকাতদল উভয়েই রয়েছে। তাদের হাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র থাকার কথাও জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
দুর্গম পাহাড়ে অপহরণকারীদের শক্তিশালী ডেরায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালানো হলেও অপরাধীরা দ্রæত স্থান পরিবর্তন করে এবং সহজেই আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাহাড়ে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে সমন্বিত ও ধারাবাহিক অভিযান জোরদার করতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব এবং এই দায়িত্ব পালনে কোনো রকম গাফিলতি কাম্য নয়।