কক্সবাজারে ‘সাদা সোনা’ উৎপাদনে আগাম প্রস্তুতি

1

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

দেশের লবণ উৎপাদনে কক্সবাজার জেলা অন্যতম। সাদা সোনা খ্যাত লবণ উৎপাদনের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষীরা। তবে নভেম্বরে মৌসুমের শেষ ঝড় বা বৃষ্টির আশঙ্কাটা শেষ হলেই পুরোদমে শুরু হবে লবণ উৎপাদন। কক্সবাজার বিসিকও বলছে একই কথা। আগামী ১০-১৫ দিন পরে পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হবে জেলাজুড়ে।
গতকাল শুক্রবার ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর কিছু অংশে আগাম লবণ মাঠে কাজ করতে দেখা মিলেছে চাষিদের। বিশেষ করে জেলার মহেশখালী, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, হোয়ানক, কুতুবজোম, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর লবণ উৎপাদনের হাব। সেখানকার কিছু জায়গায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে। একই অবস্থা কুতুবদিয়ায়ও। সেখানেও অগ্রিম লবণ চাষ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের খুরুশকুল, ভারুয়াখালী, চৌফলদন্ডী ও চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী-ডুলাহাজারা-বদরখালীতে লবণ উৎপাদনের প্রস্তুতি দেখা গেছে।
চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়ায় গত ৪ নভেম্বর প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয়। স্থানীয় চাষিদের মতে, কুতুবদিয়ায় ৭০ শতাংশ, পেকুয়ায় ৫০ শতাংশ, টেকনাফে ১০ শতাংশ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৪০ শতাংশ মাঠ প্রস্তুত হয়েছে। বাকি উপজেলার চাষিরাও মাঠে নামতে শুরু করেছেন।
লবণ চাষি অলি উল্লাহ এ মৌসুমে ৩ একর জমি লবণ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করেছেন। মাঠে নিরলস কাজ করছেন চাষীরা। লবণের বেড সমান করছেন, পানি দিচ্ছেন আর বিছানো কাগজে ফোটা ‘সাদা সোনা’ বেডের অদূরেই লবণ জমানোর গর্তে ফেলছেন। চাষিরা বলছেন, এখনো লবণের দাম কম, তবে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত দামেই লবণ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। যদিও চলতি নভেম্বরে গত বছরের তুলনায় লবণের দাম অনেক কম বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। মৌসুম ভালো হলে এবার উৎপাদিত লবণের ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশাবাদী তারা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে মূলত লবণের মৌসুম শুরু। এসময়ে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে দেড় লাখের অধিক মেট্রিক টন বেশি ধরা হয়েছে।
লবণের লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভ‚ঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর লক্ষ্যমাত্রা আরো বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।
তবে এখনো পর্যন্ত পুরোদমে চাষিরা লবণ চাষ শুরু না করায় ঠিক কতজন কৃষক এবার লবণ উৎপাদনে থাকবেন তা নিশ্চিত করেনি বিসিক। পুরোদমে চাষাবাদ শুরু হলে জরিপ শেষে তা বলা যাবে বলে জানান বিসিকেই এই কর্মকর্তা।
গত বছরের তথ্য মতে, ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, যা বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরুর পরবর্তী ৬২ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এবার তাপমাত্রা বেশি এবং ঝড়–-বৃষ্টি না হলে লবণ উৎপাদন ২৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা নির্ধারণ করা হয় ২৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।