কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষ থেকে পুলিশি অভিযানে আটক ১৮ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ১৫ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল শনিবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী। শুক্রবার গভীর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার আবাসিক হোটেল ‘ইউনি রিসোর্ট’ থেকে তাদের আটক করা হয় বলে সদর থানার ওসি ফয়জুল আজীম নোমান জানান। গ্রেপ্তাকৃতদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধীতাসহ বিভিন্ন সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
কারাগারে পাঠানো ইউপি সদস্যরা হলেন, রামুর কাউয়ারখোপ ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. আজিম মিয়া (৩৫), ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. কায়েস (৪২), ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী (৫৫), জোয়ারিয়ানালার ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন (৩৭), চকরিয়ার সাহারবিলের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জসিম উদ্দিন (৪৮), ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার জুনায়েদুল হক (৪০), পশ্চিম বড় ভেওলার ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ইরফানুর রহমান (৪০), বদরখালীর ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার কফিল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর (৪৬), বমুবিলছড়ির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. বেলাল উদ্দিন (৪০), ২নং ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুর রহমান (৪২), কোনাখালীর ১নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম (৫৫), কাকারা ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার নজরুল ইসলাম (৩৫), শাহারবিলের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল জলদাস (৩৩), টেকনাফ সদর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহ আলম (৩৯) ও কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীর ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া জঙ্গি (৫৪)। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখা। সেখানে আনুমানিক ৭০ জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে বিপুল সংখ্যক তরুণ হলরুমটি ঘেরাও করে। পরে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ক পরিচয়ধারীরা হলে ঢুকে তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই করে। সেখানে ১৮ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেন তারা। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ওসি ফয়জুল আজীম নোমান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের কলাতলী এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সরকারবিরোধী ‘গোপন বৈঠক’ করার খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশের একটি দল হোটেলটি ঘিরে ফেললে বেশ কয়েকজন কৌশলে পালিয়ে যান। পরে সেখানে সম্মেলন কক্ষে অবস্থান করা ১৮ জন ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়। আটক ইউপি সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির নেতা। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিরোধীতাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
পরে রাতেই আটকদের পুলিশ ভ্যানে করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয় বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা-বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার সভাপতিত্বে এতে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার অন্তত ৫ শতাধিক ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান অংশ নেন।
তিনি বলেন, সন্ধ্যায় সভা শেষে অতিথিসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি চলে গেলেও কক্সবাজার জেলার কিছু ইউপি সদস্য অবস্থান করছিলেন ওই রিসোর্টে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু কর্মী আকস্মিক হোটেলটি ঘেরাও করে তাদের আটকে দেন। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ১৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কী কারণে পুলিশ তাদের আটক করেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি ইউপি চেয়ারম্যান।
ওসি ফয়জুল বলেন, রাতে আটক ইউপি সদস্যদের থানার আনার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ পাওয়ায় ১৫ জনকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার এবং বাকি তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শনিবার বিকালে গ্রেপ্তারদের কক্সবাজার আদালতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সমন্বয়করা ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, হোটেলটির সম্মেলন কক্ষের ভেতরে পুলিশ আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করায় ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের কর্মীদের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
মারধর নয়, ভুল বোঝাবুঝির কারণে সামান্য ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ প্রতিনিধির।