কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারে টানা বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত। পানিবন্দি হয়ে আছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। ৪ দিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এই দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন দ্বীপের মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, কক্সবাজারে এখনও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল আছে। এতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর উত্তাল, জোয়ারের সময় সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়েছে উপক‚লে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরপাড়ে গেছেন কয়েকশ পর্যটক। মাইকিং কিংবা সতর্ক করে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন লাইফ গার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা।
সি-সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউগাছ উপড়ে যাচ্ছে জোয়ারের পানির আঘাতে। এরপর লাবনী পয়েন্ট সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা, ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্স ও দোকানপাট পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সুগন্ধা পয়েন্টে জোয়ারের পানিতে বেশি দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সে পানি আঘাত করেছে। এছাড়া কলাতলী পয়েন্টেও একই অবস্থা।
এদিকে কক্সবাজারে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ উপকূলের অন্তত ৫০টি এলাকায় বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার তথ্য মিলেছে।
সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দ্বীপ উপজেলার কুতুবদিয়ার। এ দ্বীপের দক্ষিণে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে কবি জসীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প ভবনের দক্ষিণ পাশে ৫০ মিটারের মতো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে এ ইউনিয়নের পূর্বপাড়া, সন্দ্বীপপাড়া, হাইস্কুল পাড়া ও শান্তি বাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধসংলগ্ন মৌলভী পাড়া ও মফজল আহমদ পাড়ার প্রায় ২০০ বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
উপজেলার উত্তর ধুরং ইউনিয়নের মিয়ারাকাটা ও দক্ষিণ ধুরংয়ের বাতিঘর পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, বায়ুবিদ্যুৎ এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। দ্বীপের ৭-৮ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ বলেন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের ধাক্কায় পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে। ৪ দিন ধরে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপের বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছেন।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের সার্ভিস ট্রলার সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ৪ দিন ধরে সব ধরনের নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, দ্বীপে ভোগ্যপণ্য ফুরিয়ে এসেছে। বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে তাও দাম চড়া। এ অবস্থায় দ্বীপের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর সর্তক সংকেত বহাল রয়েছে। এ কারণে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নৌযান চলাচল করতে পারবে।
বৈরি আবহাওয়ায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার সদর, ঈদগাঁও, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়ায় লাখো পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। প্রতিবছর বর্ষায় বৃষ্টিতে এসব এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এছাড়া টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির রয়েছে। এসব শিবিরে অন্তত ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পাহাড়ের ঢাল ও নিচে ঝুঁকিতে বাস করেন। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরেও পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।