কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ৪ ঘন্টার ব্যবধানে এই মামলা খারিজ করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি করেন মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার মৃত ডা. আমান উল্লাহর ছেলে কেফায়েতুল ইসলাম। মামলায় মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন ও এডিসি (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদ, অতিরিক্ত ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোমিনুল হক ও দেবতোষ চক্রবর্তী, ভ‚মি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মিলন কান্তি চাকমা, সার্ভেয়ার কেশব লাল দাস, ইব্রাহিম, সিরাজুল হায়দার ও আবুল খায়ের এবং ৬ জন স্থানীয় অধিবাসীকে আসামি করা হয়। স্থানীয় আসামিরা হলেন- মাতারবাড়ির লাইল্যা ঘোনা এলাকার মো. সেলিম, সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ইসলাম মিয়ার ৩ ছেলে-মেয়ে অলি আহমদ, জামাল উদ্দিন ও তাহেরা বেগম, আলী আসকরের ছেলে রোমেনা আফরোজ এবং মাতারবাড়ির মগডেইল এলাকার আবু ছালেক। বাদীর পক্ষে মামলাটি উত্থাপন করেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া।
কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ মামলার বাদি কেফায়েতুল ইসলামের ২০০ ধারায় জবানবন্দি নেন। পরে বিকালে মামলাটি খারিজ করে দেন একই আদালত।
মামলার এজাহারে অভিযোগ তোলা হয়, চলতি ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাদি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের জন্য গেলে ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অন্য আসামিদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
বাদির অভিযোগ, তাকে অফিসে বসিয়ে রেখে বাধ্য করে তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন এবং ঘুষের অবশিষ্ট টাকা ৭ দিনের মধ্যে দিলে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার আশ্বাস দেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘুষ নেয়ার পর বাদির অধিগ্রহণ হওয়া ৯৪, ৫০৭৯, ৫০৮২ ও ৫০৮৬ দাগের ক্ষতিপূরণের চেকে মনোয়ারা বেগমসহ অন্য ৬ জনের কেনা সম্পত্তি দেখিয়ে প্রাপ্য ১৮ লাখ ৩ হাজার ৩১৯ টাকাকে কর্তন করে বাদিকে ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মনোয়ারা বেগমসহ অন্য আসামিদের দেয়া হয়।
বাদি কেফায়েতুল ইসলামের দাবি, মনোয়ারাসহ অন্য আসামিদের ক্রয় করা ও দখলীয় জমির দাগ নাম্বার ৫০৪১, যা অধিগ্রহণের আওতায় পড়েনি। অথচ জেলা প্রশাসকসহ অন্য আসামিরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এলাইনমেন্টের বাইরের জায়গা অধিগ্রহণ দেখিয়ে মনোয়ারা বেগমসহ ৬ আসামির কাছ থেকে ৩৫ শতাংশ ঘুষ নিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি এই অপরাধের বিচার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকার সেগুন বাগিচার সদর দফতরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হয় কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা করতে।
বাদির আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বুধবার দুপুরে বাদির এজাহারটি আদালত গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বাদির জবানবন্দিও গ্রহণ করেন। পরে বিকালে মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের পাবলিক প্রকিসিউটর(পিপি) এডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যে সমস্ত উপাদান থাকা দরকার, এই মামলায় তা ছিল না। তাই মামলাটি খারিজ করে দেন বিজ্ঞ আদালত।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণাধীন অফিস, তাই আমাকেও দায়ি করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে আসলে যারা দায়ি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।