ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ১৪শ কোটি টাকা

3

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা। তবে একই সঙ্গে প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রায় ৪২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। প্রকল্পের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে এই ব্যয় বৃদ্ধি ও সাশ্রয় হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ও সময়ের পরিবর্তন কিছুটা মেনে নিতে হলেও, সাশ্রয়ী পদক্ষেপের মাধ্যমে ওয়াসা আরও উন্নত ও টেকসই স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়তে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য প্রথমবারের মতো আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আসছে পুরো শহর। হালিশহরে ক্যাচমেন্টের অধীনে প্রথম প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির মূল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে হালিশহর এলাকায়। ইতিমধ্যে সরকারের অনুমোদন পাওয়া আরও দুটি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও একই জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ফলে একসঙ্গে তিনটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে পৃথকভাবে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন না হওয়ায় সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ৪২০০ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া চট্টগ্রাম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। করোনা মহামারির কারণে বিলম্বিত হলেও বর্তমানে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, পিডবিøউডি রেট সিডিউল পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ডিজাইনে টেকসইকরণ আনতে গিয়ে অতিরিক্ত ১৪১০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২২০ কোটি টাকা। গতকাল রবিবার একনেক সভায় এই ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। একই সাথে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রকল্পের।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মূল পরিকল্পনায় হালিশহরে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করার কথা ছিল। পরবর্তীতে পতেঙ্গা ও কাট্টলী ক্যাচমেন্ট এলাকার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও সেখানে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে পৃথকভাবে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। এতে আমরা প্রায় ৪২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারছি।
ব্যয়বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সময় ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা, এখন তা ১২০ থেকে ১২২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে অনুযায়ী মালামাল ও যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে। প্রকল্প টেন্ডার পর্যন্ত যেতে যেতে ২০১৪ সালের রেট সিডিউলের জায়গায় ২০১৮ সালের রেট কার্যকর হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যয় সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পয়োপাইপলাইন বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮২ কিলোমিটার অগভীর (২ থেকে ৪ মিটার গভীরতায়) এবং ২০ কিলোমিটার গভীর পাইপলাইন (৭ থেকে ১৪ মিটার গভীরতায়)। এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন। প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এসব স্থাপনার গঠনগত কাজ ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরের প্রায় ২০ লাখ নাগরিক আধুনিক স্যুয়ারেজ সংযোগ সুবিধা পাবেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের শেষে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২৮ হাজার-এ।
১৯৬৩ সালে ওয়াসা সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কাজ শুরু হলেও এখনো ওয়াসা পানি সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। পয়োনিষ্কাশন বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ ৫০ বছর পর ওয়াসা পয়োনিষ্কাশন-প্রকল্প গ্রহণ করে। নগরীকে ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ভাগ করে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন চলছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার সূচনায় নেয়া প্রথম প্রকল্পটি এর আগেও ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠেছিল একনেকে। তখন সে অনুমোদন পায়নি। তবে এবার প্রকল্পের বেশ কিছু পরিবর্তনের কারণে একনেক অনুমোদন পেয়েছে এ প্রকল্প। এরমধ্যে অন্যতম কারণ, বাকি দুই প্রকল্পের ৪২০০ কোটি টাকা সাশ্রয়।