ওয়াসার পাইপ সংস্কার শেষ হলো চারদিন পর

4

এম এ হোসাইন

দীর্ঘ চারদিন পর চট্টগ্রাম ওয়াসার সঞ্চালন পাইপলাইনের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে মেরামত সম্পন্ন হয়। এরপর ট্রায়াল চালু করা হয়। এর ফলে ৪ দিন পর কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ এর উৎপাদন শুরু হয়। যদিও শোধনাগারটি এখনো পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। সংস্কার কাজ শেষ করতে ওয়াসার সময় লেগেছে ৪ দিনের বেশি। এই সময়ে সংস্থাটি হিসাব করেছে, ২৪ ঘণ্টায় রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর ফলে ৪ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের কুয়াইশ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে গত সোমবার দুপুর ১২টায় ফুটো হয়ে যায় ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন। এরপর পানি শোধনাগারটি বন্ধ করতে হয়েছে। যার ফলে নগরের ৩০টি এলাকার বাসিন্দা পানির সংকটে পড়েছেন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় সংস্কার কাজ শেষ হয়। ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষামূলক উৎপাদনের পর গতকাল শনিবার বিকেল থেকে শোধনাগারটি উৎপাদনে যায়। এর ফলে পানি সংকট কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই দিন লাগবে বলে জানিয়েছে ওয়াসা।
তবে শুক্রবার থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা শোধনাগার চালু হলেও বেশিরভাগ এলাকায় গতকাল শনিবারও পানি না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হালিশহর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের এখনো পানি আসেনি। ৫ দিন ধরে পানি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আগে পানি ধরে রাখতাম, এখন সেটাও সম্ভব হয়নি। কেনা পানি দিয়ে সব করতে হচ্ছে।
বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন বলেন, ওয়াসার কাজ শেষ হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য বসে আছি। আমাদের এলাকায় পানি নেই। সোমবারের পর থেকে একদম পানি আসেনি।
চালুর পরও পানি না পাওয়ার বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, চালুর পর সবাই মোটর দিয়ে পানি টানছে, যার ফলে শেষের দিকে পানি যেতে পারছে না। সবাই পানি জমাতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হতে সোম বা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ‘জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ওয়াসা সিডিএ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলাকালে কুয়াইশ এলাকায় ১,২০০ মিলিমিটার ব্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। শোধনাগার বন্ধ থাকায় ওয়াসার রাজস্ব ক্ষতি প্রতিদিন ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মেরামতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, নগরে পানি সরবরাহের জন্য সংস্থাটির চারটি পানি শোধনাগার রয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে ২৮ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি আসে। গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। ৪ দিন ধরে একটি শোধনাগার বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমে যায় এবং বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, শোধনাগার বন্ধ থাকায় নগরের উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখান বাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকাননসহ অন্তত ৩০টি এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, নগরে এমনিতেই পানির সংকট, কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর থেকে এক ফোঁটাও পানি মিলছে না, ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় মেরামত শেষ করে ট্রায়াল চালাই। সবকিছু ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। কম চাপে পানি দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার বিকাল থেকে পুরোপুরি চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফুটো ছাড়াও পাইপলাইনের সংযোগস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। লাইনটি মাটি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট গভীরে। প্রথমে পাইপে জমে থাকা পানি বের করতে হয়েছে, এরপর ঢালাই ভেঙে মেরামতকাজ শুরু করা হয়। এজন্য সময় লেগেছে। এখন আমরা আবার ঢালাই করে দেব। ক্ষতিপূরণের জন্য চিঠি দিয়েছি, এখন যে অপচয় হয়েছে তা ক্ষতিপূরণ চাইব। মেরামতের ব্যয় তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে।