এম এ হোসাইন
সাংগঠনিক কাঠামোতে নেই এমন ‘কাল্পনিক’ পদে পদোন্নতির আয়োজন চলছে চট্টগ্রাম ওয়াসাতে। আজ ওয়াসার উচ্চতর সিলেকশন বোর্ডের সভার এজেন্ডায় রাখা হয়েছে এমন সাংঘর্ষিক বেশ কিছু পদ। আবার প্রবিধানমালার পদের সাথে সাংগঠনিক কাঠামোর ভিন্ন পদের একীভুত করার চেষ্ঠাও করা হচ্ছে। তাছাড়া একপদ ডিঙিয়ে পদোন্নতির বিষয়ও আছে এজেন্ডায়।
মূলত অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি দিতে পারে প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি বা প্রবিধানমালা মানতে হয়। সাংগঠনিক কাঠামো নেই এমন কোনো পদে লোকবল নিয়োগ বা পদোন্নতি দেয়ার ক্ষমতা নেই প্রতিষ্ঠানের। চট্টগ্রাম ওয়াসাতে সাংগঠনিক কাঠামো ও প্রবিধানমালাতে বেশকিছু অসঙ্গতি আছে। এসব অসঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে পদোন্নতি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সাংগঠনিক কাঠামো আর নিয়োগবিধিতে সাংঘর্ষিক কিছু তো দেখি না। এমন যদি কোনো পদ থাকে সেটা বাদ দিয়ে দিব। অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে আসতে পারে। আপত্তিজনক হলে সেটা বাদ দেয়া হবে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসাতে ‘সচিব’, ‘উপসচিব’,‘সহকারী সচিব’, ‘যানবাহন কর্মকর্তা’ শিরোনামে পদনাম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোতে এসব কোনো পদই বিদ্যমান নেই। আবার চট্টগ্রাম ওয়াসাতে কিছু পদ সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকলেও নেই নিয়োগবিধিতে। এমনই পদ হল ‘ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার’, ‘এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার’। পদ দুটিতে পদোন্নতি দেয়ার জন্য সিলেকশন কমিটির সভাতে এজেন্ডাভ‚ক্ত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, প্রবিধানমালা ও সাংগঠনিক কাঠামোর সাংঘর্ষিকতার সুযোগ নিয়ে একপদ এগিয়ে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে ‘নির্বাহী প্রকৌশলী’ ও ‘উপসচিব’ পদে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী সহকারী প্রকৌশলী পদ হতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়া যাবে। কিন্তু ওয়াসাতে সহকারী প্রকৌশলীকে সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলীতে পদোন্নতির বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে উপসচিব পদটি সাংগঠনিক কাঠামোতে নেই। সাংগঠনিক কাঠামোর ‘ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার’ পদটির সাথে প্রবিধানমালার ‘উপসচিব’ পদটি একীভুত করে ‘উপসচিব (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার’ নাম দিয়ে পদোন্নতির জন্য এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার উচ্চতর সিলেকশন বোর্ডের আজকের ৬৩তম সভায় মোট ২৯টি পদের পদোন্নতির বিষয় এজেন্ডাভুক্ত আছে।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পানি সরবরাহ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ফারজানা মান্নান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পদোন্নতির আগের দিন কোথায় কি সমস্যা আছে সেটা আপনি (প্রতিবেদক) আমাকে বলতে পারেন না। আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে দেন।’
এমনিতে চট্টগ্রাম ওয়াসাতে নিয়োগপত্র ছাড়া কিংবা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেনি এমন অনেক লোকবল নিয়োজিত আছে। যাদের বেতন রাজস্ব খাত থেকে দেয়া হচ্ছে। মাস্টাররোল, দৈনন্দিন ভিত্তিতে, আউটসোর্সিং এমন নামে এসব জনবলকে চিহ্নিত করে ওয়াসা।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষ্ণ কুমার সরকার বলেন, ‘বিষয়টি সচিবালয় শাখা থেকে দেখা হয়। মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও এতে থাকবেন। ওয়াসাতে এটা নিয়োগ নিয়ে আমার প্রথম মিটিং। সভায় সাংগঠনিক কাঠামো আর প্রবিধানমালার মধ্যে কোনটা অনুসরণ করা হবে সেটা আমারও প্রশ্ন থাকবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাংগঠনিক কাঠামোতে নেই এমন কোনো পদে কাউকে পদোন্নতি দিলেও তাদের বেতন দিতে পারবে না। সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজন হলে সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে আনা যায়। উপসচিব আর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার যেভাবে এক করে দেয়া হয়েছে সেটাও অন্যায়। উপ-প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদ নিয়েও আপত্তি আছে। এজেন্ডায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত এদের পদোন্নতি দিবে মনে হয় না। যারা বোর্ডে আছেন তারা এমন বোকামি করার মতো লোক নয়।’