নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা গতকাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়। এবারের বলীখেলায় মেলা বসবে কি বসবে না, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়, শুরু থেকে। সড়কে যাতে কোন রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেই জন্য প্রশাসন শুরুতে সড়কে দোকানপাট বসানোর বিপক্ষে অবস্থান করলেও পরে বলীখেলার ঐতিহ্যের সাথে মেলার ঐতিহ্যের মেলবন্ধন উপলব্ধী কওে তিনদিনের জন্য মেলার অনুমতি দিয়েছেন। আসমরা দেখেছি গত বৃহস্পতিবার থেকে বলীখেলাকে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা, শুক্রবারে বলীখেলা সম্পন্ন হয়। আজ মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে। প্রকৃতপক্ষে খাতা-কলমে মেলার মেয়াদ তিনদিন হলেও আগে পরে প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে এ মেলা। দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় জাতীয় সংবাদপত্রে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, প্রতি বছরের মতো বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল লালদীঘির মাঠে বলীখেলা হবে। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলীখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বলীখেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লালদীঘির মাঠ ঘিরে বসছে বৈশাখী মেলা। প্রতি বছর এ সময়টাতে তাপপ্রবাহ থাকে। এবারও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এক্ষেত্রে বলীখেলা ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বলী খেলায় চট্টগ্রামের মেয়র ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সময় ও দেশ যত বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে, তত বেশি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। একটি জাতির পরিচয়ের দর্পন তাদের সংস্কৃতি। চট্টগ্রামের এ বলীখেলা আমাদের শত বছরের লালিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। বলীখেলাকে ঘিরে তিনদিনের মেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখে সে জন্য আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রতিবছর বলীখেলা আসলে আয়োজক এবং নগর অভিভাবকগণ ঐতিহ্যের কুৃস্তিখেলাকে ধরে রাখার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নির্দিষ্ট অফিস এবং অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলার আশ্বাস দিলেও তা আশার আলো দেখেনি। আমরা আশা করি, বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন একজন সজ্জন ও সংস্কৃতিবান মানুষ। তিনি এবারের বলীখেলার পরেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন প্রত্যশা। এ জন্য জায়গা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেব। যা যা সহযোগিতা দরকার, সিটি করপোরেশন থেকে করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। বলীখেলা ও মেলার সাথে সংশ্লিষ্টদেরও এ বিষযটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য আমাদের আহবান থাকবে। এছাড়া যে আবদুল জব্বার চৌধুরী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুব সমাজের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন প্রজ্জ্বলনের জন্য এমনটি কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন, সেই সময় এটি ছিল সবচেয়ে বড় সাহসী ও সৃদৃঢ় মনোবলের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আবদুল জব্বার বা তাঁর পরিবার এ যাবৎ রাষ্ট্রীয বা স্থানীয় পর্যায়ে কোন স্বীকৃতি পান নি। চসিক একুশে ফেব্রæয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসে গুণীজনদের যে সম্মাননা পদক দিয়ে থাকে, আমরা আশা করব আবদুল জব্বার সওদাগরকে মরণোত্তর সম্মাননা দিয়ে চসিক মেয়র তাঁর অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পাবেন। গতকাল ১১৬তম বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে, আগামীতেও যেন আরো সমৃদ্ধ হয় এ বলীখেলা ও মেলা সেই প্রত্যাশায় রইল।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব স¤প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা। বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদীঘির পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে। তবে মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন দল উপদল অবৈধভাবেভাবে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে।