পূর্বদেশ ডেস্ক
‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে দেশের ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মতামত চেয়েছে ঐকমত্য কমিশন। গতকাল সোমবার সংসদ ভবনের এলডি হল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দলগুলোর কাছ থেকে তাদের মতামত প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করবো। এ জন্য এখন পর্যন্ত আমরা কোনও সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে। রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোর প্রতি যত দ্রুত সম্ভব মতামত জানাতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান আলী রীয়াজ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
আলী রিয়াজ বলেন, এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। আমরা চাই দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে।
তিনি জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশনের উদ্বোধন উপলক্ষে ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৩৪টি দলের মোট ১০৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সভায় উপস্থিত সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তাদের সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
‘সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের হার্ড কপি ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে সব দলকে প্রতিবেদনগুলোর সফট কপিও পাঠানো হয়।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘এরপর ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা তিন দফা বৈঠকে মিলিত হন এবং সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো চিহ্নিত করেন। পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো ছকের আকারে বিন্যস্ত করা হয়। এসব ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে যে তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।
তিনি বলেন, এই ছকগুলো ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতে মোট সুপারিশের সংখ্যা হচ্ছে ১৬৬টি। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি; নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে সুপারিশ ২৭টি; বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি; জনপ্রশাসন সংক্রান্ত সুপারিশ ২৬টি; এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত সুপারিশ ২০টি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয়টি কমিশন ফেব্রæয়ারি ২০২৫ তাদের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই ছয়টি কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং পদক্ষেপ সুপারিশের উদ্দেশ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের সভাপতি। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়া অন্য সদস্যরা হলেন বদিউল আলম মজুমদার, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ইফতেখারুজ্জামান। এই কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস।
কমিশনের কাজে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে সাংবাদিক মনির হায়দারকে নিয়োগ করা হয়। তিনি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।