এ মাসে দুইশ আসনে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপি

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘নভেম্বরেই দেশে ফিরছেন’ বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা খুব শিগগিরই জানতে পারবেন নির্ধারিত তারিখ। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন।’ গতকাল শুক্রবার গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার পর গত ১৭ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেকের মামলা জটিলতার অবসান হলেও তিনি ফেরেননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য গত কয়েক মাস ধরে বলে আসছেন, ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ বলছেন না। ৬ অক্টোবর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কবে দেশে ফিরছেন। উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।’ তার কাছে আবারও জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচনের আগে তিনি দেশে থাকবেন কি না। তারেক রহমান উত্তরে বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে- সেই প্রত্যাশিত, যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
বিবিসি বাংলা জানতে চেয়েছিল, নির্বাচনে তারেক রহমান অংশ নেবেন কি না। তখনও তিনি বলেন, ‘জি, ইনশাআল্লাহ।’ তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন এমন প্রশ্ন সাংবাদিকরা শুক্রবার জানতে চান সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি তো সেটা একটি বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেই দিয়েছেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যে কোনো আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।’
গুলশানে নিজের বাসায় বসে একদল সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসমায়িক রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়েও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন গত এক বছরে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সালাহউদ্দিন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচনে খালেদা জিয়ার আসন কোনটি হবে? জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন করবেন কিনা। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নেন।’
বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন কবে চূড়ান্ত হবে জানতে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা এই মাসের (অক্টোবর) মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি দুইশ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়ত গ্রিন সিগনাল দেব, সেই প্রক্রিয়ায় আছি আমরা শেষের দিকে। যাতে করে নির্বাচনী মাঠে একক প্রার্থী হিসেবে তারা কাজ করতে পারেন। ভোট ঘিরে জোটের আলোচনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবার সাথে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত জোট কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য আপনাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

আরপিওতে পরিবর্তন চায় বিএনপি :
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদ আরপিওর যে সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীকের ব্যবহার নিয়ে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেখানে আপত্তি রয়েছে তাদের।
আরপিওতে আগের বিধান অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দে কোনো দলের প্রার্থী তার নির্ধারিত দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবে। তবে দুই বা ততোধিক দল যদি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করে, তখন জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতে হতো। তবে সম্প্রতি সংশোধিত আরপিওতে এই সুযোগটি বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জোটভুক্ত হলেও কোনো নিবন্ধিত দলকে তার নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, ‘আরপিও সংশোধনের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে আমরা এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিলাম। কারণ এভাবে সংশোধিত হলে ছোট দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
তিনি বলছেন, ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটা আমাদের দেশে প্রচলিত প্রক্রিয়া। কিন্ত হঠাৎ করে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেও সেটা রাখা হলো না।’ এমনকি এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের আলোচনায়ও বিএনপি এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বলেও জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।