এ মাসেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ

2

রাষ্ট্র সংস্কারের সুপারিশ ও অঙ্গীকারনামা সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের পর তা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদেই সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে। কমিশন বলছে, সরকারের পক্ষ থেকেও এই সময়ের মধ্যেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কয়েকটি দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ঘোষণার মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে সংলাপে অংশ নেওয়া ‘সব দল’। রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসার আহŸান জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আগামীকালের এই অনুষ্ঠান যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে, একইসঙ্গে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সামনে আরও অনেক পথ আছে। তিনি বলেন, সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ পরেও থাকবে। আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। খবর বিডিনিউজের
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সব রকমের প্রস্তুতি শেষ হওয়ার কথা তুলে ধরে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো অব্যাহত রয়েছে। এর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার আগে বুধবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতির মধ্যে মতভিন্নতা মিটিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের নিয়ে জরুরি করেন প্রধান উপদেষ্টা, যিনি ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি। সোয়া এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোটের সময় নিয়ে মতভিন্নতার বিষয়টি আবার উঠে আসে। ওই অবস্থাতেই শেষ হয় বৈঠক। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেওয়ার ধরণ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ‘থাকবে না’ বলে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন এনসিপির আহব্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিকালে যৌথ সংবদ সম্মেলন ডেকে বাম ধারার চারটি দল-সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদ স্বাক্ষর না করার কথা জানিয়েছে। এ অবস্থায় সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের এল ডি হলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আলী রীয়াজ। সেখানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপস্থিত ছিলেন। জুলাই সনদ প্রণয়নের জন্য সহযোগিতার জন্য দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি, শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তারা সকলে উপস্থিত থেকে সই করে গত এক বছরের দীর্ঘ চেষ্টার একটা পর্যায়ে উপনীত হতে পারবো। তবে এই সনদ কেবল এক বছরের প্রচেষ্টার ফসল নয়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্খা, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা, যা বারবার হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু তারপরও সকলে মিলে নাগরিকরা যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, যে স্বপ্ন দেখেছেন, যে আশা এবং প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন, সেটাকেই আমরা আংশিকভাবে হলেও ধারণ করার চেষ্টা করেছি এই জাতীয় সনদে। বিভিন্ন রকম মতভিন্নতা সত্বেও আমরা আশা করি যে আগামীকাল, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন এবং সনদে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে আরেকটি পর্যায়ের দিকে আমরা অগ্রসর হতে পারব।
ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া এবং তার ভিত্তিতে সনদ তৈরির বিষয়টি তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, সেই সনদই শুক্রবার স্বাক্ষর হবে। বিভিন্ন রকমের মতভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা আশা করি, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, সেই দলগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তারা সনদে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে আরেকটি পর্যায়ে আমরা অগ্রসর হতে পারবো। গত বছরের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, যার ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলোর রিপোর্ট জমা পড়ার পর সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়। সংস্কার উদ্যোগের এ দীর্ঘ যাত্রায় এসব দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে ঐকমত্য কমিশন। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে; দিয়েছে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট। জাতীয় সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন। জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের জায়গা। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
আলী রীয়াজ বলেন, চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের সুপারিশ জমা দেওয়া হবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদকালে এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদের (৩১ অক্টোবর) মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ একটি সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করবো। এটি বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকেও এই সময়ের মধ্যেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি শুরু করা হবে এবং তা যেন সঠিকভাবে, সুচারুভাবে এবং সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করবেন। কমিশনের মেয়াদ থাকা অবস্থায় এই প্রক্রিয়াটা আমরা সমাপ্ত চাই।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির বক্তব্যের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা আশা করছি, সকল রাজনৈতিক দল এবং এনসিপি আগামীকালের অনুষ্ঠানে যোগ দেবে এবং সনদে স্বাক্ষর করবে। সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা বড় ভূমিকা পালন করবে। কেননা সনদ তৈরি তার পটভূমি তৈরি এবং এই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে তারা একটা বিশাল ভূমিকা পালন করেছে।