আবুল খায়ের নাজমুল করিম, বাংলাদেশি সমাজবিজ্ঞানী। তিনি ১৯৫৭ সালে ইউনেস্কোর সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালুর ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন এবং বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানকে জনপ্রিয়করণে ভূমিকা রাখেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।
করিম ১৯২২ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার নোয়াখালী জেলার লক্ষীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লা জেলার ফাল্গুনকরা গ্রামে। পিতা আবু রশীদ নিজামউদ্দিন মাহমুদ এবং মাতা মোসাম্মৎ শামসুন নেদা খাতুন। তিনি ছিলেন পিতামাতার আট সন্তানের মধ্যে সপ্তম। তাঁর পিতার পরিবারে দেওয়ান ও ম্যাজিস্ট্রেট ছিল এবং মা জমিদার পরিবার থেকে এসেছেন।
নাজমুল করিম ১৯৩৯ সালে ঠাকুরগাঁও ইংরেজি হাই স্কুল (বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। পরে ১৯৪১ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
করিম ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাজ্য বৃত্তি লাভ করেন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান। ১৯৫৩ সালে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে আলাদাভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার ভালো ফলাফলের কারণে তিনি ১৯৬৪ সালে রকফেলার বৃত্তি পেয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেট করার সুযোগ পান। সেখানে তিনি টি বি বটমোরের অধীনে ডক্টরেট করেন। তার অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল দ্য মডার্ন মুসলিম পলিটিক্যাল এলিট ইন বেঙ্গল (বাংলায় মুসলিম রাজনৈতিক অভিজাত সমাজ), যা পরে ১৯৮০ সালে আরও বৃহৎ পরিসরে দ্য ডাইনামিক্স অব বাংলাদেশ সোসাইটি (বাংলাদেশ সমাজের গতিপ্রকৃতি) শিরোনামে বিকাশ পাবলিশিং হাউজ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।
করিম প্রথমে ফেনী কলেজ এবং ঢাকা কলেজে প্রভাষক হিসেবে পাঠদান করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৭ সালে ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন, ১৯৫৮ সালে এর বাংলা সংস্করণের উদ্বোধনী এবং পরে চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইবনে রশীদ ছদ্মনামে গবেষণাপত্র ও ছোটোগল্প লিখতেন।
নাজমুল করিম সৈয়দা জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জাহানারা বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাদের তিন কন্যা-শেহেরনাজ ইয়াসমিন, শাহনাজ নাসরিন এবং লামিয়া নাজনিন।
করিম ১৯৮৩ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “নাজমুল করিম শিক্ষা কেন্দ্র” তার নামে নামকরণ করা হয়। তার পরিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বৃত্তি প্রদান করা হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীকে ডঃ নাজমুল করিম স্মারক স্বর্ণ পদক প্রদান করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন ছাত্রীকে তার স্ত্রী নামে প্রিন্সিপাল মিসেস সৈয়দা জাহানারা করিম বৃত্তি প্রদান করা হয়।
নাজমুল করিম ১৯৮২ সালের ১৮ নভেম্বর বহুমূত্র রোগের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া