এসএমএসে জানা যাবে মোবাইল ফোনটি আসল কিনা

43

অবৈধ ও চোরাই পথে মোবাইল ফোন আমদানির কারণে বৈধ আমদানিকারক ও দেশিয় মোবাইল শিল্প রক্ষায় নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় আজ মঙ্গলবার মোবাইল ফোনের ডাটাবেইজ (তথ্য ভান্ডার) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি শর্টকোডে এসএমএস করেই গ্রাহক জানতে পারবেন তিনি যে ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন সেটি আসল না নকল। খবর বাংলানিউজের
সাধারণত মোবাইল ফোন আমদানির জন্য বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। বিটিআরসিতে একটি নমুনাও দিতে হয় আমদানিকারকদের। কিন্তু রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে বিভিন্ন অসাধু মহল অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসে। এই পথ বন্ধ করতে মোবাইল ফোন আমদানিকারক ও এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছে দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিলো। এজন্য একটি তথ্য-ভান্ডার তৈরি করার দাবি জানিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, বিটিআরসির তথ্য-ভান্ডারের বাইরে থাকা হ্যান্ডসেটগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং সেগুলো সহজেই বন্ধ করা যাবে।
আজ মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিটিআরসিতে আইএমইএ ডাটাবেইজ উদ্বোধন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটি শর্টকোর্ডও চালুর ঘোষণা দেবেন।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘১৬০০২’ শর্টকোডে এসএমএস করে পছন্দের হ্যান্ডসেটের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর দিলে জানা যাবে সেটি আসল বা বৈধ কিনা।
গত নভেম্বরে মোবাইল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদশে মোবাইল ফোন ইম্পোর্টাস অ্যাসোসয়িশেন (বিএমপিআইএ) এর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত নয় মাসে দেশে প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। অথচ আগের বছরের একই সময়ে দেশে আমদানি হয়েছিলো দুই কোটি ৮০ লাখ মোবাইল ফোন। এর মধ্যে স্মার্টফোন আমদানি হয়েছিল ৬০ লাখ। ২০১৭ সালে ৯ মাসে স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ (১৭ শতাংশ কম)। ১০ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম মূল্যের স্মার্টফোনের (নি¤œমানের স্মার্টফোন) বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোনের বিক্রি প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোনের বাজার। এর আনুমানিক ৩০ শতাংশ অবৈধ হ্যান্ডসেটের দখলে। অবৈধ পণ্যের অনেকাংশই পুরনো ফোন ‘রিফারবিশ’ এর মাধ্যমে দেশে আসছে।
বিটিআরসির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একবছরে মোবাইল গ্রাহক বাড়লেও কমেছে মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা। স¤প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক জানান, ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৪৬ লাখ হ্যান্ডসেট থাকলেও ২০১৮ সাল শেষে তা হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ। একবছরে কমেছে ১১ লাখ। ২০১৭ সালে মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৪ কোটি ৫১ লাখ। একবছর পর তা বেড়ে হয়েছে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেটের জায়গায় আমরা আগাতে পারিনি। কারণ, যে একবার হ্যান্ডসেট কিনে পরের বছর আর কেনা লাগে না। সম্ভবত সে কারণেই সংখ্যা কমতেছে। হয়তো প্রতিবছরই কমতে থাকবে।
তবে চেয়ারম্যানের এ মতের বিপক্ষে বলছেন বিএমপিআইএ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, গ্রে-মার্কেটের (অবৈধ বাজার) কারণে বিটিআরসির হিসাবে মোবাইল আমদানি কমেছে। কিন্তু বাস্তবে তা না। অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আমদানি কমানোর জন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি। হ্যান্ডসেটের তথ্য-ভান্ডার চালুর ফলে গ্রাহকরা জেনে নিতে পারবেন তার সেটটি বৈধ না অবৈধ। এতে অবৈধ সেট বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি অবৈধ বাজার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসবে এবং বৈধ আমদানিকারক ও উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন।