নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘর্ষণ, তাপ ও ক্ষয় কমাতে ব্যবহৃত লুব্রিকেটিং অয়েল (তরল পদার্থ) বিক্রির পাওনা চেক ব্যাংকে জমা না করে প্রায় ১২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) এর তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। দুদক প্রধান কার্যালয় গত ২০ অক্টোবর মামলাটি দায়েরের অনুমতি প্রদান করে।
মামলার আসামিরা হলেন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. মোশারফ হোসেন (৪৪), হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন (৫৮) ও উপ-ব্যবস্থাপক মো. আতিকুর রহমান। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে একে অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ করে সেই টাকা অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর ও পরিবর্তন করে মানিলন্ডারিং করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমদ কর্মকর্তা হওয়ার পরেও নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুব্রিকেন্ট ক্রয় করে অপরাধ করেছেন বলে প্রতিয়মান হয়। তিনি চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল মারা যাওয়ায় তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।
মামলার সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এওসিএল) স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) হতে নিয়মিত লুব্রিকেটিং অয়েল ক্রয় করে বাজারজাত করতো। এওসিএলের সত্ত¡াধিকারী হচ্ছেন এসএওসিএলের পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ। তিনি ব্যসায়িক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ অপরাধ হলেও এসএওসিএলের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বাকিতে লুব্রিকেন্ট ক্রয় করতেন। বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এওসিএল এসএওসিএলকে প্রতিবছর জুন মাসের শেষের দিকে বাকিতে লুব্রিকেটিং অয়েল ক্রয় বাবদ মূল্য পরিশোধের চেক প্রদান করে। কিন্তু চেকটি এসএওসিএল কর্তৃক ব্যাংকে জমা না করেই ব্যাংক বুকে জমা দেখানো হয়। আসামি আতিকুর রহমান, বেলায়েত হোসেন সংশ্লিষ্ট বিল ভাউচারসমূহ প্রস্তুতপূর্বক স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু চেকগুলো ব্যাংকে জমা দেয়া হয়নি। এমনকি চেকগুলো ব্যাংক থেকে প্রত্যাখাত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে এওসিএরের বিরুদ্ধে কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এরমধ্যে বিপিসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এওসিএলের নিকট থেকে এসএওসিএল মোট ১১৯ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৪৯ টাকা পাওনা রয়েছে।
এসএওসিএলের ১১৪তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এওসিএলকে ফ্রেঞ্চাজি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তিপত্র পাওয়া যায়নি। ফ্রেঞ্চাজি নিয়োগের চুক্তি না করে এওসিএল কর্তৃক ফ্রেঞ্চাজি হিসেবে পরিচালিত সকল ব্যবসায়িক আর্থিক কর্মকান্ড আইন বহিভর্‚ত।
এসএওসিএল কর্মকর্তাই ক্রেতা
লুব্রিকেন্ট ক্রেতা এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এওসিএল) এর সত্ত্বাধিকারী ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) এর পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ। তিনি ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ অপরাধ হলেও এসএওসিএলের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বাকিতে লুব্রিকেন্ট ক্রয় করতেন। অথচ কোম্পানি আইনের ১০৫ ধারায় উল্লেখ আছে, পরিচালক পরিষদের সম্মতি ব্যতিরেকে উহার কোনো পরিচালক অথবা তিনি কোনো ফার্মের একজন অংশীদার থাকিলে উক্ত ফার্ম বা উক্ত ফার্মের যে কোনো অংশীদার কিংবা কোনো প্রাইভেট কোম্পানীতে তিনি একজন সদস্য বা পরিচালক থাকিলে উক্ত কোম্পানী প্রথমোক্ত কোম্পনীর সহিত পণ্য বা কোনো জিনিসপত্র বিক্রয় বা সরবরাহের জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারিবেন না। কিন্তু আইন অমান্য করে আসামিরা এবং এসএওসিএলের মালিক মঈন উদ্দিন আহমেদ একে অপরের যোগসাজশে আর্থিক অনিয়মে জড়িত ছিলেন।











