চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, মেয়র হিসেবে চসিকের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে এই শহরে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আলোকায়নের ব্যবস্থা ছিল। যা আধুনিক নগরীর জন্য ছিল অপ্রতুল। নগরীর এই আলোকায়নের ব্যবস্থাকে শতভাগে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কসহ অলি-গলিতে এলইডি বাতি সংযোগের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে ৮৬ কিলোমিটার এলইডি বাতি দ্বারা নগর-সড়ক আলোকায়ন করা হয়েছে। নগরীতে ৮০ ভাগ এলাকা এলইডিতে আলোকায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট সড়কসমূহ শতভাগ এলইডি বাতি দ্বারা আলোকায়নের জন্য একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষমাণ আছে। এটির অনুমোদন পেলে শতভাগ এলইডির আলোতে নগর আলোকিত হবে।
এই প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের হওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরে শতভাগ আলোকায়ন হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে মেয়র নগরীর প্রতিটি ওর্য়াডসহ প্রধান প্রধান সড়ক, অলিগলিতে সন্ধ্যার পর সড়ক বাতি সমূহ প্রজ্জ্বলিত হয় কিনা তা সার্বক্ষনিক তদারকির জন্য গুরুত্বারোপ করেন। সভায় সিটি মেয়র বলেন নগরীর ৪১ টি ওর্য়াডে প্রায় ৩৫ হাজার ৫৯৪টি টিউব বাতি ও এনার্জি বাতি রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৫০টি বাতি বিভিন্ন কারণে বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সড়ক বাতি তদারকির জন্য অত্যাধুনিক ৪টি এরিয়াল লিফ্ট রয়েছে। নষ্ট কিংবা বন্ধকৃত এ সব বাতিগুলো এরিয়াল লিফটের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সভায় মেয়র ৪১টি ওয়ার্ডে বিদ্যমান ওয়ার্ড ভিত্তিক বাতির পরিসংখ্যান পড়ে শোনান। সভায় নগর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে আরো জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন মেয়র।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চসিকের কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৪১তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। চসিকের সচিব মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার, মেয়রের একান্ত সচিব মুফিদুল আলম। সভায় চসিকের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলসহ চসিকের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সরকারি ও সেবা সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিটি মেয়র আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহব্বান জানান। সভায় ওয়ার্ড পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিত্যক্ত জায়গায় উদ্যান স্থাপন বা বনায়ন করা, বৃক্ষরোপণ ও গাছ পরিচর্যার জন্য মালি ও ভ্যান গাড়ি প্রদান, কর্পোরেট সংস্থার সাথে এমওইউ স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাদের অর্থায়নে নগরীর ফুটপাত, মিড আইল্যান্ড, সড়কদ্বীপ, গোলচত্বর ও ফোয়ারাসমূহের সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের কার্যক্রম গ্রহণ, শীলকালিন সময়ে শুষ্ক মৌসুম হিসেবে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা, ঋণের সার্ভিস চার্জ আবর্তক, দল, সিডিসি এর হিসেবে জমা, কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলমান ছাদবাগান কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে চসিক পরিচালিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেনের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল আগামী ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণ উৎসব পালন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ট্রেড কোর্স চালুকরণ বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ,আইন শৃঙ্খলা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, যোগাযোগ, দারিদ্র হ্রাসকরণ ও বস্তি উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, হিসাব নিরীক্ষা এবং পানি ও বিদ্যুৎ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানবৃন্দ নিজ নিজ কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন এবং আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।