এম.এ আজিজ নয়, ফুটবলের উন্নয়নে চট্টগ্রামে অন্য মাঠ তৈরি করা হউক

1

সালাহউদ্দিন শাহরিয়ার চৌধুরী

ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন শহর চট্টগ্রাম। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামকে বানিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রাম শুধু ক্রীড়াঙ্গন নয়, সব সময় অনেক কিছুতেই অবহেলিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে চট্টগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন খেলাধুলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে হউক, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হউক, সকল ধরনের ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সবেধন নীলমনি হচ্ছে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম। শুধু কি খেলা, জাতীয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কনসার্ট এবং বিভিন্ন কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য শেষ ভরসা এম এ আজীজ ষ্টেডিয়াম। চট্টগ্রামে আরেকটি ষ্টেডিয়াম জহুর আহম্মদ ষ্টেডিয়াম, যেটি ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ভেনু হওয়ায় সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে এবং ক্রিকেট বোর্ড অনুমোদিত টুর্নমেন্ট ছাড়া সেই ষ্টেডিয়ামে অন্য কোন ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। তাই চট্টগ্রামের সকল ধরনের ক্রীড়ানুষ্ঠানের জন্য একমাত্র ভেনু ছিলো এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম, এখন সেটির নিয়ন্ত্রন দিয়ে দেয়া হয়েছে ফুটবল উন্নয়নের জন্য এবং তা এক বা দু’বছরের জন্য নয় ১২ শর্তে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এর ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, এনএসসি বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগন একবারও ভাবেননি- বাকি খেলাধুলার কি হবে। প্রশ্ন থেকে যায় বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে কেন তারা এই কাজটি করতে গেলেন- সেটি কি চট্টগ্রামের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ নয়? এমনিতেই মাঠের অভাবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন পিছিয়ে যাচ্ছে তাই এক সময় শ্লোগান উঠেছিলো “মেলার মাঠ নয় আমরা, খেলার মাঠ চাই”। এনএসসি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশান বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রশ্ন রাখতে হয় এই ষ্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক, জাতীয়, বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ে বাফুফের অধীনে কয়টি ফুটবল টুর্নামেন্ট সারা বৎসর আয়োজন হবে বা করবে তার কোন সঠিক পরিকল্পনা তারা কি ঘোষনা করেছেন, নিশ্চয় করে তারা সারা বছর এই মাঠটি ব্যবহার করবেন না, তাহলে বাকী সময় নিশ্চয় মাঠটি খালি পড়ে থাকবে,অন্যদিকে মাঠের অভাবে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্র্তৃক বাকি সব খেলাধূলাও বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু কি তাই বাফুফের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ফলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে চাকুরীরত অনেকের আর প্রয়োজন হবে না, তাই অনেকে হয়তো কর্মচ্যুত হবেন যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে অন্তত ৭০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।
বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন না করে সকল ধরনের খেলার আয়োজনকারী এই ষ্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র একটি খেলার জন্য নিয়ন্ত্রনে দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। এবং আমি বলবো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস হয়ে যাবে। বরং প্রয়োজন ছিলো এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করা। বাংলাদেশের ফুটবল যে জায়গায় ছিলো ফিফার র‌্যাংকিংএ দিন দিন তার অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ফিফা র‌্যাংকিং এ পিছিয়ে থাকা অনেক দেশ এখন বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলছে এমন নজিরও আছে। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফুটবল উন্নয়নের কথা বলে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়ামকে বাফুফের একক কর্তৃত্বে নিয়ে অন্যসব খেলা আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা কোন অবস্থাতেই ক্রীড়াঙ্গনের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
চট্টগ্রামের ক্রীড়াক্ষেত্রে সুবিধা বাড়িয়ে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়নের জন্য নতুন করে হকি স্টেডিয়াম, টেনিস কোর্ট, উডেনফ্লোর জিমনেসিয়াম, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহনকারী খেলোয়াড়দের আবাসন এর ব্যবস্থা করা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনকে আরো সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন সেখানে সেগুলোর কোন ব্যবস্থা না করে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়ামকে বাফুফের একক নিয়ন্ত্রনে প্রদান করা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি অশনি সংকেত। চট্টগ্রামের প্রতি এহেন বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এটি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। তাই জনগনের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করাই হবে সমীচীন, নয়তো চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোধী জনগন হয়তো বাফুফের সব আয়োজন বয়কটও করতে পারে। ইতোমধ্যে এনএসসির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা, তাদের অভিযোগ চট্টগ্রামে যে পরিমান খেলাধূলা হয় সে পরিমান মাঠ নেই, তাই শেষ ভরসা এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম তাই তাদের দাবি, খেলাধুলার স্বার্থে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ বিকল্প ব্যবস্থা না করে এই সিদ্ধান্ত যেন বাতিল করা হয়।
লেখক: ডেপুটি রেজিষ্ট্রার
বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ