নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কুতুবদিয়া চ্যানেলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস বহনকারী (এলপিজি) দুটি জাহাজে (ট্যাংকার) আগুন লাগার ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রবিবার বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম. ফজলার রহমানকে আহব্বায়ক করে এবং নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং এক্ষেত্রে এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা নিরূপণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শনিবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ সুফিয়া এবং মাদার ভেসাল ক্যাপ্টেন নিকোলাস নামে দুটি জাহাজে আগুন লাগে।
আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল পয়েন্টে নোঙর করা ‘সুফিয়া’ নামে এলপিজি বহনকারী একটি লাইটার জাহাজ ও মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাসে হঠাৎ আগুন লাগে। তবে মাদার ভেসেলের আগুন নাবিকদের চেষ্টায় কিছুক্ষণের মধ্যে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হলেও লাইটার জাহাজে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পরে খবর পেয়ে আগুন নেভাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ শুরু করে। গতকাল রবিবার দুপুরের দিকে এটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনায় লাইটার জাহাজের ১৮ জন ক্রু, দুজন মুরিং ম্যান, তিনজন প্রহরী এবং মাদার ভেসেল থেকে সাগরে ঝাঁপ দেওয়া আটজন বন্দর নিরাপত্তারক্ষীসহ মোট ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নয় জন বাংলাদেশি, আট জন ইন্দোনেশিয়ান এবং একজন ভারতীয় রয়েছেন। নৌবাহিনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের একটি আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন জহিরুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে কুতুবদিয়া চ্যানেল এলাকায় এলপিজিবাহী মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে গ্যাস লোড করা হচ্ছিল। আগুনে মাদার ভেসেলের সঙ্গে লাইটার জাহাজকে বেঁধে রাখা দড়িটি ছিড়ে যায় এবং লাইটার জাহাজটি ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যায়। গ্যাসভর্তি থাকায় লাইটার জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।
সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ১২ দিনের ব্যবধানে চারটি দেশীয় জাহাজে অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক। গত ৩০ বছরে এমন কিছু আমি দেখিনি। ২৫ বছর বিদেশি জাহাজে ছিলাম। খুবই উঁচুমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল এবং সেভাবে মেইনটেইন করা হত। দেশীয় জাহাজে ১২ দিনের মধ্যে পরপর ৪টা জাহাজে অগ্নিকান্ড আর বিস্ফোরণ নিঃসন্দেহে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা।
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ‘বাংলার জ্যোতি’ নামে একটি অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘বাংলার সৌরভ’ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে।