নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে কাটল অনিশ্চয়তা। অনুমতি মিলল নগরীর ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজক কমিটির সঙ্গে সভা শেষে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে কর্মসূচি হবে সীমতি পরিসরে। অপরদিকে সিআরবিতে চলবে দুইদিনব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
আয়োজকরা সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইলেও তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোকে গানের তালিকা প্রশাসনকে আগেই দেখাতে হবে-এমন শর্ত রয়েছে। পহেলা বৈশাখের এ অনুষ্ঠান দেখভাল করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে এ সভায় সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান হবে। ব্যাপ্তি কমিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে তারা আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার আয়োজকদের সঙ্গে প্রশাসনের সভায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানের অনুমতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে আয়োজকরা অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়কারী সুচরিত দাশ খোকন জানান, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিতর্ক হবে এমন কোনো গান বা কবিতা না রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকেও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব গান পরিবেশন করা হবে, সেসবের তালিকাও আমরা প্রশাসনকে দেব বলেছি।
নগরীর ডিসি হিলে গত ৪৬ বছর ধরে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ বাংলা নববর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করে আসছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তাদের সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদারকি কমিটি করা হয়েছে। এতে ছাত্র প্রতিনিধি, জাসাসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন।আয়োজকদের অনুষ্ঠানস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ডিসি হিলে সীমিত পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিবছর এখানে জমকালো আয়োজন হয়ে আসলেও এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কাটিই দেখা হয়েছে।
ডিসি হিলের আয়োজনের মধ্যে থাকবে মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান, নৃত্য, আবৃত্তিসহ নানা পরিবেশনা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। দিনব্যাপী এই আয়োজনে ৫১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেবে। প্রতিটি সংগঠনের জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে ৮ মিনিট করে। প্রসঙ্গত, সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম চার যুগ ধরে ডিসি হিলে বর্ষবরণ উৎসব পালন করে আসছে।
অপরদিকে নগরীর আরেক দৃষ্টিনন্দন স্থান সিআরবিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে দুইদিনব্যাপী। খোলামেলা পরিবেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। প্রতিবারের মত এবারও উৎসব জাঁকজমকপূর্ণ করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিআরবি নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ। তবে এবার থাকছে না সাহাব উদ্দিনের বলীখেলা। সিআরবির অনুষ্ঠানে ৬০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৭টা থেকে, যা চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আয়োজনের দ্বিতীয় দিনেও এই সময়সূচি থাকছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।