এবার রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ‘কিছুটা স্বস্তি’

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাংলাদেশের আকাশে আজ চাঁদ দেখা গেলেই সিয়াম-সাধনার মাস পবিত্র রমজান শুরু হবে। এতে আগামীকাল রবিবার হবে রমজানের প্রথম দিন। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এ মাসটি সিয়াম-সাধনা, নামাজ-কিয়ামসহ ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন।
গতকাল সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে অনুযায়ী দেশটিতে আজ শনিবার হবে রমজানের প্রথম দিন। সৌদির মুসলিমরা এদিন প্রথম রোজা পালন করবেন বলে গালফ নিউজ থেকে জানা গেছে।
এদিকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে গতকাল বাজারে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এবার রমজান উপলক্ষে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, রমজান উপলক্ষে এবং শুক্রবার (গতকাল) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে বেড়েছে ক্রেতাদের আনাগোনা। বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট থাকলেও অন্যসব ভোগ্যপণ্যের দাম অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে রয়েছে ব্যাপক ভিড়। ক্রেতারা দরদাম করে পণ্য কিনছেন। একইভাবে মুরগির দোকানের সামনেও দেখা গেছে ভিড়।
দোকানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বিদেশি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বুটের বেসন ৯০ থেকে ১৪০ টাকা, খোলা আটা ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট আটা ২ কেজি ১০০ টাকা, খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা, দেশি চিনি ১৪৫ টাকা, সয়াবিন এক লিটার ১৭৫ টাকা, দুই লিটার ৩৫০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৫০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ টাকা ও ভারতীয় ১১০ টাকা, চিনি আতপ চাল ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৯০ টাকা, আস্ত বুটের ডাল ১২০ টাকা, খোলা হলুদের গুঁড়ো ৪০০ টাকা, খোলা মরিচের গুঁড়ো ৫০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা ও বড় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, আদা ১৩০ থেকে ২০০ টাকা, রসুন ১৫০ থেকে ২৩০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, মুড়ি ৮৫ টাকা এবং বিভিন্ন জাতের এবং মানের খেজুর ২০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে ডিম ১৩০ টাকা ডজন, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা (হাঁড়সহ), ইলিশ ১ হাজার টাকা, পাঙ্গাস ২৪০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা ও বড় রুই মাছ ৪৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সবজির বাজারে লেবু ১০০ টাকা হালি। অন্যান্য শাক-সবজির মধ্যে প্রতি কেজি টমেটো ৩০ টাকা, দেশি গাজর ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা ফালি, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, অন্যবার রোজার আগের চেয়ে এবার একটু স্বস্তি রয়েছে বাজারে। বিষয়টির সঙ্গে বিক্রেতারাও একমত হয়েছেন। তারা বলছেন হুট করেই এবার কোন কিছুর দাম বাড়েনি। যা বাড়ার তা আগেই বেড়েছে।
বাজার করতে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম গত সপ্তাহের মতোই অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কোন কোন জিনিসে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি মনে হচ্ছে। তবে সেটার পরিমাণে একেবারেই কম। কিন্তু বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা খাইরুল আলমগীর বলেন, সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে অস্বাভাবিক যে বাড়া, সেটি নয়। অনেক সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে, ফলে ঐসব সবজির দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখি।
মুদি দোকানি মো. মামুন বলেন, বাজারে পণ্যের দাম গত সপ্তাহের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আগে আমাদেরকে ১৫ থেকে ২০ কার্টুন তেল দিতো। এখন তেল কমিয়ে দিচ্ছে ১ থেকে ২ কার্টুন। এই অল্প তেল আমি কাকে দিবো? আমার তো অনেক কাস্টমার আছে, তাদেরকে তো তেল সরবরাহ দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন ৮৫০ টাকায় যে তেল বিক্রি করতে হয়, সেটি কিনতে হচ্ছে ৮৪৬ টাকায়। পরিবহন খরচসহ তাহলে কত টাকা লাগে? আমরা ২০ টাকা বেশি বললে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের ধরে। এর চেয়ে বিক্রি না করাই ভালো বলে মনে করি।
এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রতিটি বাজার মনিটরিংয়ের আওতায় এনেছে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সরকারি সংস্থাগুলো। তারা বিভিন্ন বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মজুতদার, অতিরিক্ত মুনাফা লাভে বিক্রি, কৃত্রিম সংকট তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করছেন।