মনিরুল ইসলাম মুন্না
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসেন গৃহিণী ফেরদৌসি আক্তার। তিনি বলেন, গত বছর রমজানের তুলনায় এ বছর দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল। অন্যান্য বছর মাছ-মাংস ও সবজি ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিলেও এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না। এ রকম বাজার দর যেন সারা বছরজুড়ে থাকে।’
গতকাল শুক্রবার সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজারে গেলে ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরেও বাজারে সবজির মৌসুমে দাম ছিল খুবই চড়া। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। অথচ চলতি বছর সবজির বাজার একেবারে ঠান্ডা। দাম একেবারে নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারাও সবজি কিনছেন একেবারে থলে ভরে। মৌসুম ছাড়াই কম দামে সবজি কিনতে পারায় ক্রেতারাও বেশ খুশি। পাশাপাশি রমজানের শুরু থেকে বাজারে বেগুনের দাম সেঞ্চুরি হাঁকালেও বর্তমানে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত, প্রতিকেজি খিরা ৪৫ টাকা, প্রতি কেজি শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ৫০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪৫ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, লেবু মানভেদে প্রতি হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে মাছের বাজার এখনও স্থিতিশীল। পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়ার দামও ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। এছাড়া কই ৮০০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রুই মাছ আকৃতি ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, গরুর মাংস (হাঁড়সহ) বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, অন্যান্য রমজানের তুলনায় এখনো আমাদের সবজির বাজার নাগালের মধ্যে রয়েছে। দুই-তিন ধরনের সবজি ছাড়া বাকি সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে।
তবে বেশি দামের যে কয়েকটি সবজি রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, এগুলোর এখন মৌসুম নয় বলেই বাজারে সরবরাহ খুবই কম, তাই দাম বাড়তি।
আরেক ক্রেতা মারুফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, সত্যি কথা বলতে বর্তমানে দাম কম যাচ্ছে, গত শীতকাল থেকেই মূলত সবজির দাম কম যাচ্ছে। বাজারে অন্যান্য কিছু পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সবজির দাম তুলনাম‚লক কম। বলতে গেলে সাধারণদের নাগালের মধ্যে রয়েছে সবজির দাম। তবে ঢেঁড়স, পটল, করলা এমন কয়েকটি সবজির মৌসুম এখন না হওয়ায় সেগুলোর দাম বাজারে বাড়তি। এছাড়া বেগুনের দামও তুলনামূলক বেশি বাজারে। রমজানের শুরুতে বেগুনের দাম বেড়েছিল, সেই থেকে কিছুটা কমলেও এখনো ৮০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা আল ফাহাদ বলেন, অন্যান্য রমজানের সময়ের তুলনায় এ বছর রমজানে সব সবজির দামই তুলনামূলক কম যাচ্ছে। বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। তবে ঢেঁড়স, করলা, পটলের দাম তুলনামূলক বেশি। কারণ, এগুলো এই সময়ের সবজি নয়, মূলত মৌসুম না হওয়ায় এগুলোর দাম বাড়তি।
অন্যদিকে রমজানের শুরুতে বেগুন প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও, বর্তমানে তা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লম্বা বেগুনগুলো ৬০ টাকা কেজিতেও পাওয়া যাচ্ছে।